অবৈধ যানের জটে অতিষ্ঠ বগুড়াবাসী
যানজটে নাকাল উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর বগুড়া। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত যেন যানজট লেগেই থাকে এই শহরে। ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং ও প্রধান সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাথে দোকান, মোড়ে মোড়ে সিএনজি ও অটোরিকশার অস্থায়ী স্ট্যান্ডের কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
দিনের অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন। বগুড়া শহরের প্রবেশদ্বারের সবকটি পথে প্রায় ৫০ হাজার অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো, সিএনজি ও লোকাল মিনিবাসের দাপট বেশি। শহরের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ১৫ মিনিটের ২ কিলোমিটার পথ যেতে সময় লাগে ঘণ্টার বেশি।
শহরবাসী জানায়, ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করলেও সেটি পরিকল্পিত নয়। ব্যস্ততম সময়ে শহরে যানজটের চিত্র দেখলে বোঝাই যায় না সড়কে আসলে ট্রাফিক পুলিশ কোন ডিউটি করছেন। যানজটের চাপে তারাও দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন।
বগুড়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। ট্রাফিকের জনবল কম হওয়ায় ব্যস্ততম শহরে মাঝে-মধ্যে একটু যানজট লেগে যায়। তবে যানজটের মূল কারণ লেভেল ক্রসিং। দিনে ১১বার লেভেল ক্রসিংয়ে ৩০ মিনিট করে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। ফলে যানজট পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া শহরে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট দিনদিন বাড়তে থাকলেও পৌরসভা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার কারণেই এই যানজট।
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে দক্ষিণে চার লেনের শেরপুর রোডের দুই লেনই মিনিবাস, সিএনজি, অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার দখলে। মাঝে-মধ্যে এসব ছোটবড় গাড়িগুলো আড়াআড়ি করে রাখা হয়। এতে সড়ক দিয়ে অন্য গাড়ি যেতে পারে না। এই সড়কের মফিজ পাগলা মোড়, ঠনঠনিয়া, পিটিআই, সরকারি কলেজ, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড় এলাকায় অস্থায়ীভাবে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়।
অন্যদিকে সাতমাথা থেকে পশ্চিমে স্টেশন রোডের চার লেনের দুইলেনই দখলে থাকে সিএনজি ও মিনিবাসের। এর চেয়ে ভয়াবহ চিত্র সাতমাথা থেকে উত্তরের চার লেন সড়কে।
সিএনজিচালক মনির হোসেন বলেন, আমরা কী করবো। সড়কের ওপরই আমাদের স্ট্যান্ড নির্ধারিত। তাই আমরা গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নামাচ্ছি ও ওঠাচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংকের কর্মকর্তা শাহজাহান কবির বলেন, ব্যস্ততম এই শহরে এত রিকশা, অটো চলে যে আমরা সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে পারি না। বগুড়া শহরের মূল পয়েন্ট দিয়ে একটি রেলপথ রয়েছে। এই রেলপথ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ বার ট্রেন আসা-যাওয়া করে। প্রতিবার সড়কের সিগন্যালগুলো কমপক্ষে ৩০ মিনিট বন্ধ থাকে। বিশেষ করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১ বার সিগনালে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। অফিস যেতে বাড়ি থেকে এক ঘণ্টা আগে বের হলেও ১৫ মিনিটের পথ শেষ হয় না।
উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মধ্যে সবচেয়ে জনবহুল শহর বগুড়া। দিনে ৩-৪ লাখ মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে এই শহরে আসা-যাওয়া করছে। শহরের চারপাশের বাইপাস সড়ক পথে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করে। এর ফলে শহরের ভেতরে ও বাইরে যানজট লেগেই থাকে। শহরের মধ্যে নিয়ম না মেনে দিনরাত মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান যাতায়াতের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও ব্যক্তিগত যানবাহন রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে পার্কিং করায় যানজট বাড়ছে।
শহরের দত্তবাড়ি, বড়গোলা, থানা মোড়, সাতমাথা, খান্দার, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়, রেলগেট, নামাজগড়, টিনপট্টি মোড়, বনানী মোড়, তিনমাথা রেলগেট, চেলোপাড়া মোড়ে যানজট লেগেই থাকে। এসব পয়েন্টে হাতে গোনা ২/১ জন ট্রাফিক পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায়। এছাড়া বাইপাস রোডে যানবাহনের চাপে যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে প্রথম বাইপাস রোডের তিনমাথা রেলগেট ও আন্তজেলা বাস টার্মিনাল সংলগ্ন চারমাথা, বনানী, মাটিঢালী এলাকায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
শহরের সাতমাথা থেকে ছয় মিনিট পরপর শেরপুরগামী লোকাল বাস, গেটলক বাস ছাড়ে। আবার শেরপুর থেকে ছেড়ে আসা গাড়ি সাতমাথা দিয়ে টার্নিং হয়ে আবারও শেরপুরের দিকে যায়। এতে সাতমাথামুখী রোডে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা বলেন, যানজটমুক্ত বগুড়া করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু অরাজকতা আছে, এগুলো ঠিক করা হবে। অবৈধ রিকশার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। শিগগিরই একটা সিদ্ধান্ত দেয়া যাবে।
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা পৌর সপ্তপদী মার্কেটের ব্যবসায়ী আমিনুল ও আযম সরকারসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, অটোরিকশা ও অটোবাইকগুলো বেআইনিভাবে শহরে যত্রতত্র গাড়ির স্ট্যান্ড বানিয়ে যাত্রী ওঠানামা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অথচ অদূরেই ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বসে টিআই ও সার্জেন্টদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। এসব দেখে আমরা সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলি।
বগুড়া বিআরটিএ বগুড়ার মোটরযান পরিদর্শক এস এম সবুজ বলেন, জেলায় চলাচল করা বেশির ভাগ সিএনজিচালিত অটোটেম্পু এবং সব অটোরিকশা ও অটোবাইকই অবৈধ। এগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই। এই অটোরিকশা ও অটোবাইকগুলোর চালকরাও অদক্ষ। ট্রাফিক আইন বলতে তারা কিছুই জানে না। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
এফএ/এএসএম