আজ বড় বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি গেলেন জয়পুরহাটের জামাইরা
জয়পুরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে বসেছে মাছের মেলা। মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যাবেন জামাইরা।
জয়পুরহাটের কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে একদিনের জন্য ঐতিহাসিক এ মেলা বসেছে। এদিনকে ঘিরে পাঁচশিরাতে ভোর ৪টা থেকে সারাদিন চলে মাছ কেনাবেচার উৎসব। তাইতো প্রতিবছর এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন লোকজন। পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে প্রতিবছর বসে এ মাছের মেলা।
মেলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় একশ বছর আগ থেকে চলে আসা এ মেলায় নদী, দিঘি ও পুকুরে স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা দেশীয় প্রজাতির টাটকা মাছে ভরপুর। সকাল থেকেই ক্রেতারা ভিড় জমান মাছের মেলায়।
মেলাকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিটি বাড়িই আত্মীয়-স্বজনে ভরে যায়। তবে মেলার বিশেষত্ব হলো জামাইরা। যে যার সাধ্যমতো মেলা থেকে বড় বড় মাছ কিনে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ি। মেলার প্রতিটি দোকান ভরপুর থাকে দেশীয় জাতের বোয়াল, রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাশ, বিগহেড, বাঘাইড়সহ নানা ধরনের মাছ। এবার মেলায় ২৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৭ হাজার টাকায়।
মেলায় মাছ বিক্রি করতে আসা সাইফুল ইসলাম, রেজাউল করিম, নজরুল ইসলাম ও উজ্জ্বল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, কাতলা, রুই, মৃগেল ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং বাঘাইড়, বোয়াল ও চিতল মাছ ১৩০০ থেকে ২০০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের মাছ ৩৯০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতাও বেশি।
মেলায় মাছ কিনতে এসেছেন টাঙ্গাইল পৌরসভার মুলগ্রামের জামাই আশরাফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহাসিক এ মেলা উপলক্ষে প্রতিবছরই দাওয়াত করেন শ্বশুর। প্রতিবছরই মেলায় আসি। যেহেতু এই মেলা জামাইদের কেন্দ্র করে তাই মাছ একটা কিনতেই হয়। এবারো ৯ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। তবে অন্য বছরের চাইতে এবার মাছের দাম একটু বেশি।
কালাই পৌরশহরের পূর্বপাড়া মহল্লার আব্দুল মান্নান বলেন, এই দিনের অপেক্ষায় মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনরা চেয়ে থাকেন। তাই শত কষ্ট হলেও তাদের জন্য আয়োজন করতেই হয়। আজ বাধ্য হয়েই মেলাতে এসেছি। একটি বড় মাছ কিনবো। নিয়ত আছে তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে একটি মাছ কিনবো এবার।
পাঁচশিরা বাজারের ইজারাদার ছানোয়ার হোসেন ছানো বলেন, ‘এ মেলার কোনো আয়োজক নেই। প্রতিবছর এই দিনে মেলা অটে বসে যায়। তবে মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এক সপ্তাহ ধরে এলাকায় মাইকে প্রচার করেন। এই দিনে মেলায় প্রচুর মাছ আমদানি এবং বিক্রি হয়।’
কালাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ প্রথম বৃহস্পতিবার পাঁচশিরা বাজারে মাছের মেলা বসে। মেলায় ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ওঠে। বড় বড় মাছ দেখে এলাকার চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার মেলায় এক থেকে সোয়া কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে আশা করছি। মৎস্য বিভাগ চাষিদের সবসময় মাছচাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে। আগামীতে মেলার পরিধি আরও বাড়ানো হবে।
রাশেদুজ্জামান/এসআর/জিকেএস