নদী থেকে ডাঙায় উঠছে ৩০ মানতা পরিবার
জলে জন্ম, জলে মৃত্যু। এমন ছকেবাঁধা জীবনেই অভ্যস্ত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মন্তাজ ইউনিয়নের শতাধীক মানতা পরিবার। মুসলিম ধর্মাবলম্বীর এসব পরিবারের সবাই মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের সবাই নদীতে নৌকায় বসবাস করেন।
তবে দীর্ঘ তিন দশক পর নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে এবার পানি থেকে ডাঙায় ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন মানতা সম্প্রদায়ের ৩০ পরিবার। এরইমধ্যে এসব পরিবারের জন্য নদী পাড়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৩০টি ঘর তৈরি করা হয়েছে। এখন চলছে সড়ক নির্মাণসহ ঘর হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। সরকারের এই উদ্যোগে খুশির বাতাস বইছে চর মন্তাজের মান্তা পল্লীতে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন গত বছর মানতা সম্প্রদায়ের মানুষদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর থেকেই মানতা সম্প্রদায়কে সরকারের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়। এবার এরই ধারাবাহিকতায় জলে ভাসা এই সম্প্রদায়ের মানুষদের ডাঙায় স্থায়ী ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসন।
চর মন্তাজ ইউনিয়নে সুলিজ বাজার খালে মানতা পরিবারের ৭০ বছর বয়সী জাহাঙ্গীর সরদার বলেন, সরকার আমাগো লইগ্যা ঘর বানাইছে এটা এহনও বিশ্বাস হয় না। এই বয়সে আর নৌকায় থাকতে ইচ্ছে করে না। প্রতিদিন যখন নদীতে মাছ ধরতে যাই ঘরের পাশে খাড়াইয়া দেখি। ঘরগুলা দেখতেও অনেক ভালো লাগে। সরকাররে ধন্যবাদ জানাই। এহন রাস্তাডা হইয়া গেলেই আমরা ঘরে উটতে পারমু।
মানতা পল্লীর সব থেকে বয়স্ক রুস্তম সরদারের বয়স এখন ৯০ এর কোঠায়। জন্ম থেকে এই বয়স পর্যন্ত তার পরিবারের ছেলে-মেয়ে-নাতি সবাই নৌকায় বসবাস করছেন। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন সেমিপাকা টিনেরঘরে উঠবেন এটা শুনে তার যেন আর অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। এবার অন্তত তার পরিবার পরিজন নিয়ে একটি নিশ্চিন্ত জীবনের শুরু হবে, এটা তার জীবনের শেষ পাওয়া বলে জানান তিনি।
তবে মানতা পরবিারের সদস্যদের মৃত্যুর পর তাদের লাশ দাফনের জন্য একটি গোরস্থান নির্মাণ করে দেওয়ার দাবিও রুস্তম সরদার।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসফাকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক হলেও মানতা পরিবারের কারো জতীয় পরিচয়পত্র ছিলো না। এ কারণে গত বছর তাদের জতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয় এবং এবছর তাদের ঘর দেওয়ার পাশপাশি সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরপত্তা বেষ্টনিতেও অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।
মানতা পরিবারের সন্তানদের প্রি-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। পাশপাশি এই এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও জানান ইউএনও।
আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/এমএস