যানজটে নাকাল কুমিল্লা নগরী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, ০৮ নভেম্বর ২০২১

অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র পার্কিং, সরু সড়ক, সড়কের ওপর অবৈধ স্ট্যান্ড, ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং অনুমোদনহীন তিন চাকার যানবাহনের চাপে কুমিল্লা নগরীর সড়কগুলোতে যানজটের চিত্র নিত্যদিনের। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ২০১২ ও ২০১৭ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে যানজট নিরসনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সিটি প্রতিষ্ঠার ১১ বছরেও নগরীর যানজট নিরসন হয়নি। উল্টো আরও দীর্ঘ হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের দাবি একার পক্ষে যানজট নিরসন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। প্রয়োজন ট্রাফিক পুলিশসহ চালকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আর ট্রাফিক বিভাগের দাবি সীমিত লোকবল থাকা সত্ত্বেও তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যানজট নিরসনে।

সিটি করপোরেশন সূত্রমতে, ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে সদরের ১৮টি ওয়ার্ড ও সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ড। এর মধ্যে সদরের এক থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে যানজট সবচেয়ে বেশি। সদরের ১৪৭ কিলোমিটার সড়কে ৯ হাজার ৭০০টি রিকশা চলাচলের অনুমতি থাকলেও এ সড়কে প্রতিদিন চলছে অন্তত তিনগুণ বেশি। অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাতো আছেই।

jagonews24

ট্রাফিক সূত্র জানায়, জেলায় ট্রাফিক পুলিশে কাজ করছেন ৮৪ জন। এর মধ্যে কনস্টেবল ৫৩ জন, শহর উপপরিদর্শক (টিএসআই) ৩, শহর সহকারী উপপরিদর্শক (এটিএসআই) ১৬, সার্জেন্ট ৭ ও ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) ৫ জন। এর মধ্যে ৯ জনকে দাপ্তরিক কাজ করতে হয়। যানজট নিরসনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ পুরো জেলায় কাজ করছেন ৬০ জন। এ অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

তাদের মতে, যানজট নিরসনে নগরীর রাস্তা প্রশস্তকরণ, রোড ডিভাইডার স্থাপন, সড়ক থেকে অবৈধ স্থাপনা ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদ ও কঠোর আইন প্রয়োগ করে অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব।

নগরী ঘুরে দেখা গেছে, প্রাচীন ব্যাংক ও ট্যাংকের নগরী কুমিল্লা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। নগরীর ব্যস্ততম এলাকা পূবালী চত্বরে অঘোষিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু কান্দিরপাড় নয়, নগরীজুড়ে বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অবৈধ এসব স্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো এবং যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে করে পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে সময়।

jagonews24

তাছাড়া নগরীর লিবার্টি মোড়, নজরুল এভিনিউ রোডের কালী মন্দির সংলগ্ন এলাকা, ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড, কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতাল, ঝাউতলা, কুমিল্লা মুন হাসপাতালের সামনে, শাসনগাছা উড়াল সেতুর দুই মুখে, বাদশা মিয়ার বাজার, রেল গেইট হোটেল, সালাউদ্দিন মোড়, মনোহরপুরের মাতৃভান্ডারের সামনে, রাজগঞ্জ ট্রাফিক মোড়, কোতয়ালী থানা রোড, মোগলটুলি মোড়, জজকোর্টের সামনে, চকবাজারের ফয়সল হাসপাতালের মোড়, চকবাজার বেবীস্ট্যান্ড, লাকসাম রোডের রামঘাট, টমসম ব্রিজসহ অন্তত ২৮টি স্থানে প্রতিদিন যখন তখন যানজটে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়।

লোকবল সংকটের কারণে যানজটপ্রবন এ স্থানগুলোর মধ্যে জেলা ট্রাফিক পুলিশ মাত্র ১২ থেকে ১৩টি স্থানে মানুষ দিতে পেরেছে। প্রতিদিনই জেলায় ১৭টি উপজেলার বিপুল পরিমাণ মানুষের আগমনের ফলে নগরজুড়ে পরিবহনের চাপে বেসামাল পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশরা।

যানজটে নাকাল কুমিল্লা নগরী

এ বিষয়ে কুমিল্লা সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে কুমিল্লা নগরীতে কাঠামো বিন্যাস যেভাবে আছে সিটির মেয়র যেই হোক যানজট নিরসন তার জন্য কঠিন হবে। যত্রতত্র ভবন নির্মাণের কারণে সড়ক সরু হয়ে গেছে। এর জন্য দায়ী সিটি করপোরেশন নিজেই। কারণ তারাও নগরীর একাধিক স্থানে সড়কের ওপর ভবন নির্মাণ করে সড়ক সরু করেছে। অপরিকতিল্প নগরায়নের ফলে এ নগরে যানজট নিরসন করা কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।

জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. এমদাদুল হক বলেন, যানজট নিরসনে সবাইকে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। যে পরিমাণ লোকবল প্রয়োজন তার তুলনায় ট্রাফিক পুলিশ অনেক কম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারপরও অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে আমরা যানজট নিরসনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

কুমিল্লা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ বলেন, ট্রাফিক পুলিশের সংকটের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমরা লোক দিতে পারছি না। এ বিষয়টি সরাসরি পুলিশ হেড কোয়ার্টার দেখে। কুমিল্লায় লোকবল সংকটের বিষয়টি হেড কোয়ার্টারে জানানো হয়েছে।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, সচেতন না হলে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিয়েও যানজট নিরসন হবে না। যানজট নিরসনে সড়ক ব্যবস্থাপনাসহ অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ের প্রয়োজন বলে পুলিশের এ কর্মকর্তা মনে করেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, আমার একার পক্ষে যানজট নিরসন করা সম্ভব নয়। জেলা ট্রাফিক পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টায় যানজট নিরসন অনেকটায় সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া নতুন করে পরিকল্পনা করা হয়েছে নগরী যানজটমুক্ত করতে। নগরে যানবাহনের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সকাল বিকেল দুই শিফটে তিন চাকার যান চলাচলের পরিকল্পনা হতে নেয়া হয়েছে।

সড়কের ওপর অবৈধ স্ট্যান্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, শহরের মধ্যে যতগুলি স্ট্যান্ড রয়েছে এর একটিও আমাদের নয়। আপনারা খবর নিয়ে দেখতে পারেন এগুলি কারা অনুমোধন দিয়েছে এবং কারা এর থেকে টাকা নিচ্ছে।

জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।