বিদ্রোহে বেসামাল আ.লীগ জয় পেতে মরিয়া বিএনপি
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বরগুনা সদর পৌরসভায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠ গরম করে রেখেছেন। আর এলাকায় বেশ জনপ্রিয় এই দুই বিদ্রোহীকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল আহসান মহারাজ। এ অবস্থায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় ও বিদ্রোহী উভয় পক্ষেরই ভরাডুবি হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বরগুনা সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজকে।
তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থেকে জোরেসোরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বরগুনা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেন। আর অপর বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বরগুনার সভাপতি ও দু’দুবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান। যদিও এই দুই বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করে ইতোমধ্যেই বরগুনা পৌর এলাকায় মাইকিং করেছ জেলা আওয়ামী লীগ।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের সদ্য বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরগুনা পৌরসভার উন্নয়নে দৃশ্যমান বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ সফলভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হন। পাশাপাশি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে নিজস্ব যাকাতসহ নানাভাবে নিম্ন ও নিম্নবিত্ত পৌরবাসীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার কারনে এবারের নির্বাচনে তার অবস্থান গতবারের তুলনায় আরও সুদৃঢ় হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
আর এসব কারণেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ এবং বর্তমান মেয়র ও বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেনের অবস্থান অনেকটা মুখোমুখি। সম্প্রতি মো. শাহাদাত হোসেনের একটি শান্তিপূর্ণ পথসভায় হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুসহ অর্ধশত কর্মী-সমর্থককে আহত করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের কর্মী ও সমর্থকরা এমন অভিযোগ মো. শাহাদাত হোসেনের। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন ও তার কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকসহ তিনটি অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি একাধিক কর্মীকে হামলা চালিয়ে আহত করার পাল্টা অভিযোগও করেছেন অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ।
এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের ছেলে ও জামাতাসহ ১১৪ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বরগুনার আদালতে মামলা করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজের একজন কর্মী এবিএম জসীম। দ্রুত বিচার আদালতের বিচারক আব্বাস হোসেনের আদালতে এ নালিশি মামলা দাখিল করলে বিচারক বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেন। এ মামলায় আওয়ামী লীগ বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেনের ছেলে নাসির আল মামুন ও জামাতা আরিফ খানসহ ৪৪ জনের মান উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাত আরও ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাড. মো. শাহজাহানও রয়েছেন শক্তিশালী অবস্থানে। এর আগে পরপর দু’দুবার মেয়র পদে দায়িত্বে থাকাকালীন নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তিনিও সর্বস্তরের পৌরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। এবারের নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থী এবং সদ্য বিদ্রোহী ও বর্তমান মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের দ্বন্দ্ব সংঘাতের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহানও তার প্রচার ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকটা সুকৌশলে।
এছাড়া দুই বিদ্রোহী প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগেরই তিন তিনজন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ নিয়ে ভোটযুদ্ধে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি মনোনীত একমাত্র প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম।
এর আগের নির্বাচনগুলোতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা স্পষ্ট থাকলেও এবারের নির্বাচনে দলীয় কোন্দল অনেকটাই ম্লান বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা। সে কারণে একটি সুষ্ঠুু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং আওয়ামী লীগের ভোটের সিংহভাগ ভাগিয়ে নিতে পারলে অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গোল দিতে পারেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এসএম নজরুল ইসলাম এমন মন্তব্যও স্থানীয়দের।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এসএস/এমএস