ঝালকাঠিতে ১০ টাকার চাল বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ
অডিও শুনুন
ঝালকাঠিতে হতদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকার চাল বিক্রিতে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কার্ডধারীদের জনপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ওজনে ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত কম দিচ্ছেন ডিলার। কয়েকজনকে সেপ্টেম্বর মাসে চাল দেওয়া হয়নি। ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী গ্রামে চাল বিক্রির সময় অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কর্মসূচির আওতায় পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হতদরিদ্র ৭৯৩ জনের তালিকা করে কার্ড দেওয়া হয়। এ ইউনিয়নে দুইজন ডিলার ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করেন। এরমধ্যে দেউরী বাজার এলাকায় চাল বিক্রির জন্য ডিলার নিয়োগ করা হয় আমিরুল বিশ্বাসকে।
তিনি ৩৫৫ কার্ডধারীর মাঝে ৩০ কেজি করে ১০ টাকায় চাল বিক্রি করবেন। সপ্তাহে সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার এ চাল বিক্রি করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে কার্ডধারী ছয়জনকে চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে এ ডিলারের বিরুদ্ধে। যাদের চাল দিয়েছেন তাতেও ওজনে কম। অক্টোবর মাসেও কার্ডধারী হতদরিদ্রদের চাল ৫০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনে কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সুবিধাভোগীদের অভিযোগ, বাজারে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাল বিক্রির নিয়ম থাকলেও, আমিরুল বিশ্বাস দেউরী গ্রামের রব মৃধার বাড়িতে বসে চাল বিক্রি করছেন। নিয়মানুযায়ী চাল বিক্রির সময় ডিলারকে উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু আমিরুল বিশ্বাস নিজে উপস্থিত না থেকে চাচা বাদল বিশ্বাসকে দিয়ে চাল বিক্রি করাচ্ছেন। সঠিক মাপে তিনি চাল দিচ্ছেন না কার্ডধারীদের। এতে ওজনে কম পাওয়া ব্যক্তিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দিয়াকুল গ্রামের মো. ইসরাফিল বলেন, বুধবার সকালে চাল আনতে গিয়ে দেখি ডিলার নেই। তার চাচা বাদল বিশ্বাস চাল দিচ্ছেন। তাকে ৩০০ টাকা দেওয়ার পরে টিপসই নিয়ে চাল দেন। পাশের দোকানে গিয়ে মেপে দেখি ২৮ কেজি ৫০০ গ্রাম রয়েছে বস্তায়। আড়াই কেজি চাল কম দেওয়ার বিষয়ে ডিলারের চাচার কাছে জানতে চাইলে, তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। চালের বস্তায় ঘাটতি আছে জানিয়ে যা পেয়েছি, তা নিয়ে চলে যেতে বলেন।
কার্ডধারী একই গ্রামের শেসন আলী ফকিরের ছেলে মিলন ফকির বলেন, বাবা অসুস্থ, তাই আমি চাল নিতে এসেছি। সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের চাল দেওয়া হয়নি। দুই মাসের চাল একসঙ্গে চাইলে তা দেওয়া হয়নি। শুধু আমি না, গতমাসে ছয়জনকে চাল না দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ মাসে যে চাল দেওয়া হয়েছে তাতেও কম। ২৯ কেজি চাল পেয়েছি। টাকা নেয় ৩০ কেজির অথচ চাল দেয় ২৯ কেজি।
উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সাইদুর রহমান শাহীন বলেন, ওজনে চাল কম পেয়ে আমার কাছে অনেকেই ফোন করেন। আমি এসে দেখি, ঘটনা সত্য। প্রত্যেককে ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে। কাউকে আধা কেজি, কাউকে দেড় কেজি পর্যন্ত ওজনে কম দিচ্ছে।
তিনি বলেন, গ্রামের দরিদ্র মানুষের তালিকা আমরাই করেছি। তারা সঠিক ওজনে চাল পাবে এটাই ডিলারের কাছে আশাকরি। কিন্তু তিনি অনিয়ম করছেন। এ ব্যাপারে আমরা সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ডিলার আমিরুল বিশ্বাস বলেন, জরুরি কাজে আমি বরিশালে গিয়েছিলাম। এই সময় চাচাকে দায়িত্ব দিয়েছি। ৫০ কেজির সবগুলো বস্তাতেই চালের ঘাটতি থাকায় আমরাও কার্ডধারীদের ২০০ গ্রাম করে চাল কম দিয়েছি। ইচ্ছে করে কোনো অনিয়ম করা হচ্ছে না।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শাহনাজ পারভিন বলেন, ডিলারের উপস্থিতি ছাড়া কাউকে চাল দেওয়ার নিয়ম নেই। ওজনে কম দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। আমাদের চালে কোনো ঘাটতি থাকে না। তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নিবো।
আতিকুর রহমান/আরএইচ/জিকেএস