সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের নামে মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল নামে এক ব্যক্তি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঘর ও নলকূপ পাওয়ার আশায় ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা দরিদ্র পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের শতাধিক পরিবার এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলালের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল গ্রামে। তিনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামে বিয়ে করেন। এ কারণে ওই এলাকায় তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তার ভায়রা এইচ এম ইসমাইল হোসেন একই এলাকার সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত এবং সেখানেই থাকেন। আল হেলাল সুনামগঞ্জে এলেই তার ভায়রা এইচ এম ইসমাইল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন গ্রামের মানুষদের কাছে ধর্মীয় কথাবার্তা বলেন। এক পর্যায়ে হেলালের আচরণ ও বিনয় দেখে মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হয়।
তিনি ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে স্থানীয়দের বলেন, ‘সাব আ সানাবিল সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান’ নামে তাদের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। যেখানে ১ লাখ টাকা জমা দিয়ে ৫ লাখ টাকার ঘর পাওয়ার সুযোগ আছে। আর ১০ হাজার টাকা দিলে একটি নলকূপ দেওয়া হবে এবং তা পেতে হলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ও আমলদার হতে হবে। এভাবে হেলাল বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু গত ১০ মাসে কেউই ঘর কিংবা নলকূপ পায়নি। এরপরই ঘা ঢাকা দেন তিনি। পরে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের ফালান মিয়া (৩২) বাদী হয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার লইয়ারকুল গ্রামের মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল (৪০), তার বোন আকলিমা আক্তার (৩৪) ও আকলিমার স্বামী রেনু মিয়া (৪৫)।
মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলালের ভায়রা ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর মাদরাসায় শিক্ষক এইচ এম ইসমাইল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি আসলে বুঝতে পারিনি তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করবেন। আমিও অনেকবার উনার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
মিয়ারচর মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলাল ধর্মের নামে সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে ভণ্ড। তার শাস্তি হওয়া উচিত। যেহেতু মামলা হয়েছে আশা করি সে শাস্তি পাবে।
তাহিরপুর উপজেলার কলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কবির আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার অন্তত ছয়টি গ্রাম থেকে গরিব ও অসহায় মানুষকে ঘর ও নলকূপ দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছেন আল হেলাল। এখন তার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করতে পারছে না। উনার ফোনও বন্ধ।
দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান তারা মিয়া বলেন, দুই উপজেলায় প্রায় শতাধিক মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারা খুব অসহায় এবং দরিদ্র মানুষ। টাকা দিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। প্রশাসন উদ্যোগ নিলে হয়তো তারা টাকা পেতে পারে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার বাদী ফালান মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, প্রতারণার শিকার হওয়া সবার মতামত নিয়ে আদালতে মামলা করেছি। আশা করি, আমাদের টাকা আমরা ফেরত পাবো।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ-উজ-জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আদালত থেকে মামলাটি পেয়েছি এবং মামলাটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত স্বার্থে এর চেয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না।
এদিকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মাওলানা আবদুল আজিজ আল হেলালের মোবাইল কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এমআরআর