গাইবান্ধায় মাটিচাপায় নিহত ৩ জনের দাফন সম্পন্ন
গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায় ভেঙে ফেলা কালভার্টের নিচ থেকে ইট খুলে নেয়ার সময় মাটিচাপায় নিহত তিনজনের লাশ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জয়েনপুর গ্রামের মজিবর রহমান মোল্লার ছেলে আবদুস সাত্তার মোল্লা (৫৮), একই ইউনিয়নের তালুক মন্দুয়ার গ্রামের নুর আলম মুন্সির অর্নাস পড়ুয়া মেয়ে কাকলী বেগম (২০) ও মন্দুয়ার গ্রামের আবিসান মিয়ার ছেলে আবদুল কুদ্দুস (৩০)।
বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুল কাউয়ুম হুদা বলেন, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে আবদুস সাত্তার ও কাকলী বেগমের লাশ দাফন করা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আবদুল কুদ্দুসের লাশ দাফন করা হয়।
মাটিচাপায় একই সময়ে তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম ও আহাজারি। এ সময় পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে। নিহতদের দেখার জন্য মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তাদের বাড়িতে স্বজনদের ভিড় ছিল। এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনা মানতে পারছেন না কেউ।
এলাকাবাসী জানান, সওজের অধীনে গাইবান্ধা-সাদুল্যাপুর সড়কের লংকেরশ্বর এলাকার পুুরাতন কালভার্ট ভেঙে নতুন কালভার্ট নির্মাণ শুরু করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সোমবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা চলে গেলে রাত পৌনে ৮টার দিকে সেখান থেকে ইট আনতে যান স্থানীয় ১০-১২ জন নারী-পুরুষ। তারা শাবল, কোদাল ও খুন্তি দিয়ে জোড়াজুড়ি করে ইট টেনে বের করার সময় হঠাৎ করে ইট মাটির বড় স্তুপ ধসে পড়ে। তার চাপায় এক নারীসহ ৩ জন নিহত ও আরও ৭ জন আহত হন।
তবে দীর্ঘ সময় স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ভেঙে পড়া মাটি খুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালালেও আর কোনো আহত ও নিহত পাওয়া যায়নি। ফলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে উদ্ধার তৎপরতা বন্ধ করা হয়। খবর পেয়ে সেখানে যান ডিসি আব্দুস সামাদ ও পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ বলেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে এক লাখ টাকা করে ও আহতদের আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার কাজে জড়িতদের গাফিলতি থাকলে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনার পর সোমবার রাত ১১টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রট (এডিএম) মো. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যর তদন্ত দল গঠন করেছে প্রশাসন। তদন্ত দলকে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন তালুকদার বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মাটিচাপায় নিহত তিন জনের দাফন-কাফনের জন্য ১০ হাজার ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে প্রদান করেন।
সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তাবিবুর রহমান বলেন, গুরুতর আহতদের মধ্যে আরফি মিয়া (১৫), সেলিনা বেগম (৪০), ফুল মিয়া (৫০) ও সোহেল (৩০) সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে আহত মিনারা বেগমকে (২৫) উন্নত চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা আধুনিক সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। অন্য দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণাধীন কালভার্টের দু’পাশে অন্ধকার। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কারণ কালভার্টের দু’পাশে আলোর ব্যবস্থা বা নৈশ প্রহরী থাকলে এ দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটতো না। তারা নিহত ও আহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, ভেঙে ফেলা কালভার্টের ইট চুরি করতে গেলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
সাদুল্যাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরহাদ ইমরুল কায়েস বলেন, মাটিচাপায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় সাদুল্যাপুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে কেউ চাইলে লাশের ময়নাতদন্ত করতে পারবেন।
অমিত দাশ/এসএস/এমএস