জাল ভাসাতে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১২:০৫ পিএম, ১০ অক্টোবর ২০২১
পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে জাল ভাসিয়ে রাখার কাজ করছেন জেলেরা

লাগামহীনভাবে বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার। যখন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত সবাই তখন পটুয়াখালীর প্রত্যন্ত এলাকায় প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত পানির বোতল, তেলের বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংসের বোতল জাল ভাসানোর কাজে ব্যবহার করছে একদল জেলে। এটিকে ভিন্নভাবে দেখছেন পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা নদীতে সরেজমিনে দেখা যায়, ৩০-৪০টি প্লাস্টিকের বোতল কাপড় কিংবা জালে একত্রিত করে বেঁধে জাল ভাসিয়ে রাখার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানকার প্রায় সব জেলেই পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে জাল ফেলছেন নদীতে। এতে নতুন করে টাকা খরচ করে বেশি দামে ফ্লোট (জাল ভাসিয়ে রাখার বস্তু) কিনতে হচ্ছে না জেলেদের।

Inner-2.jpg

আমখোলা নদীর জেলে সোবাহান ফকির বলেন, ‘আগে বাজার থেকে বেশি দামে ফ্লোট (জাল ভাসিয়ে রাখার বস্তু) কিনে জালে ব্যবহার করতাম, তবে সেগুলো সহজেই ফেটে যেতো। এখন আমরা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করি। এগুলো কিনতে হয় না, এমনিতেই বাজারে কুড়িয়ে পাওয়া যায়।’

এদিকে জেলা শহরে জলাবদ্ধতার একটা বড় কারণ প্লাস্টিকের বোতল। যাচ্ছেতাই প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের পর ড্রেন কিংবা নর্দমায় ফেলার কারণে বর্ষা মৌসুমে তা জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় প্লাস্টিকের বোতলগুলো রিসাইকেল করার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয় না। তবে এসব বোতলের বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে পারলে তা প্রকৃতির জন্য ভালো বার্তা নিয়ে আসবে বলেও মনে করেন পরিবেশ সচেতন ব্যক্তিরা।

সার্কের পরিবেশ ও জলবায়ু-বিষয়ক সংস্থার মহাসচিব পরিবেশবিদ ড. মাসুমুর রহমান বলেন, আমরা বর্তমানে সাগর ও নদীর প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কাজ করছি। স্থানীয়ভাবে জেলেরা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক বোতলের যে বিকল্প ব্যবহার শুরু করেছেন তা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও প্লাস্টিক দূষণ রোধে নতুন একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

Inner-2.jpg

তিনি আরও বলেন, এগুলো যাতে কোনো অবস্থায় নদীতে মিশে না যায় সে ব্যাপারেও জেলেদের সতর্ক থাকতে হবে। কোনো অবস্থায়ই প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পর তা পরিবেশের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কীভাবে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পণ্য ফের ব্যবহার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে বড় পরিসরে গবেষণার তাগিদ দেন এ পরিবেশ বিজ্ঞানী।

এ বিষয়ে উপকূলীয় পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক স. ম. দেলোয়ার হোসেন দিলিপ বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের পেছনে পলিথিন ও প্লাস্টিক বেশি দায়ী। দেখা যায় এসব প্লাস্টিকের বোতল পুড়িয়ে ফেললেও বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। এর বিকল্প ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তা পরিবেশের জন্য ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন, জেলেরা যেভাবে পরিত্যক্ত বোতল ব্যবহার করছে তাতে পরিবেশের ক্ষতি করছে না আবার সেগুলো কাজেও লাগানো যাচ্ছে। এগুলো যাতে নদীতে মিশে না যায় সে ব্যাপারেও জেলেদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি প্লাস্টিক পণ্য যাতে বারবার ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।