মধুমতীর পেটে ২৫ দোকান, নিঃস্ব ব্যবসায়ীরা
গোপালগঞ্জের কশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া বাজার এলাকার মধুমতী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীরক্ষা বাঁধের আধা কিলোমিটার এলাকা ও অন্তত ২৫ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে নিঃস্ব হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠে ভাটিয়াপাড়া বাজারটি। দীর্ঘদিন ধরে নদীবন্দরের হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বাজারটি। এ বাজারে ভুসি, পশুখাদ্য, পাটের গুদাম, রাখি মালের গুদাম, মিষ্টির দোকান, মোবাইলের দোকান, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিনই গোপালগঞ্জসহ আশপাশের জেলার কয়েকশ ব্যবসায়ী এখানে কেনাবেচা করতে আসেন।
এর আগেও বেশ কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন এ বাজারের ব্যবসায়ীরা। ১৯৯৬ সালে ভাঙনকবলিত এলাকায় নদীর পাড় ব্লক দিয়ে বাঁধাই করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই ভাটিয়াপাড়া বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতী নদীতে দেখা দেয় তীব্র ভাঙন। চোখের পলকেই বাজারের ২৫ দোকান ও জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙন আতঙ্কে অন্য সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা হলেন- শ্যামল কুমার সাহা, জিয়াউর রহমান জিয়া, আবির হোসেন, খোকন কাজী, হায়দার কাজী, হারুন কাজী, মো. শফিকুল ইসলাম, আশরাফউদ্দিন তারা মোল্লা, আবিবার কাজী, মো. মশিউর রহমান খান, সুশান্ত কুমার সাহা, আলতাফ চৌধুরী, দিলীপ কুমার সাহা, অভিজিৎ সাহা, জাকির মোল্লা, সোহেল মোল্লা, চাঁন মিয়া শরিফ, হিরণ কারিকর, শাহজাহান কাজী, রশিদ শেখ, রমিজ মোল্লা ও বাবলু ঠাকুর।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী অভিজিৎ সাহা বলেন, হঠাৎ করে মধুমতী নদীতে ভাঙন শুরু হয়। চোখের পলকে আমার দোকান নদীগর্ভে চলে যায়। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীতে চলে যাওয়া এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
রমিজ মোল্লা নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমার দোকানে পাঁচ বস্তা ধনিয়ার বীজ, দুই মণ খেসারি বীজ, দুই মণ মসুরি ডাল বীজ, মাষকলাই, কালোজিরা ও শস্য বীজ নদীতে ভেসে গেছে। এতে আমার দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভাটিয়াপাড়া বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোকন কাজী বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ করে মধুমতী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। বাজারে এসেও কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। মুহূর্তের মধ্যে অন্তত ২৫ দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ভাঙনে দোকানঘর, মালামাল ও জমিসহ অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন বলেন, বাজার রক্ষা বাঁধটি প্রতি বছরই পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। এজন্য বরাদ্দও রয়েছে। বাঁধটি আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে এখানে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ কাজই করেনি। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
কাশিয়ানী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মশিউর রহমান খান বলেন, নদীভাঙনে এ বাজারের ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। তিনি খোঁজখবর নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রথীন্দ্র নাথ রায় বলেন, ভাটিয়াপাড়া বাজারের নদী সংরক্ষণ বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ২০-২৫ দোকান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মসজিদসহ আরও বেশকিছু দোকান ভাঙনের মুখে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলছে। আমরা চেষ্টা করছি ভাঙন রোধে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করা হচ্ছে।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফইজুর রহমান বলেন, ভাটিয়াপাড়া বাজার রক্ষা বাঁধের আনুমানিক আধা কিলোমিটার এলাকার আকস্মিকভাবে প্রবল ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি আর কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেন নদী গ্রাস না করতে পারে।
মেহেদী হাসান/আরএইচ/জেআইএম