নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু, ৩ লাখ টাকায় দফারফা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিরাপত্তা বেষ্টনীবিহীন নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবন থেকে পড়ে গিয়ে সাত্তার মিয়া (৫০) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে জেলা শহরের থানাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সাত্তার মিয়া জেলা শহরের ভাদুঘর দেওয়ানপাড়ার মৃত আইয়ুব আলী মিয়ার ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, থানাপাড়া এলাকার ইউসুফ মিয়ার বাড়িতে বহুলতল ভবন নির্মাণের কাজ করছিল ঠিকাদার আবুল মিয়ার প্রতিষ্ঠান। ভবনটি ৫ তলা পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। তাই ঝুঁকি নিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন নির্মাণ শ্রমিকরা। শুক্রবার বিকেলে সাত্তার মিয়াসহ অন্যান্য শ্রমিকরা ওই ভবনে কাজ করার সময় মাথায় করে অপ্রয়োজনীয় মালামাল ফেলতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যান সাত্তার মিয়া। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান সঙ্গে থাকা শ্রমিকরা। রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান সাত্তার মিয়া।
জানা যায়, ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে হাসপাতালের মর্গে না নিয়ে মরদেহ তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এসময় নিহতের পাশের বাড়িতে আলোচনায় বসে ঠিকাদারের লোকজন ও স্থানীয়রা। এসময় নিহতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। পরে ঠিকাদার সবার সামনে নিহতের পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা নগদ দেন। বাকি ২ লাখ ৬০হাজার টাকা রোববার (৩ অক্টোবর) নিহতের পরিবারকে দেওয়া হবে বলে জানান।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, টাকা দেওয়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে নিহতের পরিবার যেন কোনো অভিযোগ না দেন একারণে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। এসময় স্থানীয় প্রায় অর্ধশতাধিক লোকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ঠিকাদার আবুল মিয়া নির্মাণাধীন ভবনে নিরাপত্তা বেষ্টনীর না থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা করে নিহতের পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেতো গরীব মানুষ, তার বাচ্চা-কাচ্চা আছে।’
এসময় স্ট্যাম্পের মাধ্যমে কেন টাকা দেওয়া হবে এ প্রশ্ন করা হলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাটি জানে না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান তিনি।
আবুল হাসনাত মো. রাফি/এফআরএম/এমএস