‘প্রবিধানে’ আটকা জেলা পরিষদের পর্যটন বিকাশের উদ্যোগ
অডিও শুনুন
পার্বত্য জেলা পরিষদ শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয় ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর। ৩৩টি বিভাগ হস্তান্তরের মাধ্যমে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পাহাড়ের উন্নয়নে কাজ করে গেলেও স্থানীয় পর্যটনখাতে এ প্রতিষ্ঠানটির তেমন একটা উদ্যোগ নেই বললেই চলে। ২০১৪ সালে স্থানীয় পর্যটন জেলা পরিষদে হস্তান্তরের পর গত তিন বছরে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছরই এ খাতে কোটি টাকার ওপর বরাদ্দ থাকলেও বছর শেষে তা কাজে লাগানো হয় না। অথচ পর্যটনগরী হিসেবে রাঙ্গামাটির দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।
তবে জেলা পরিষদ বলছে, প্রবিধান তৈরি না হওয়ায় পর্যটন বিকাশে তারা কাজ করতে পারছেন না। প্রবিধান তৈরির কাজ চলছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে পর্যটনের দুয়ার খুলে যায়। অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করলে পর্যটকদের আনাগোনাও বেড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে রাঙ্গামাটির পাহাড়, হ্রদ ও ঝরনাকে কাজে লাগিয়ে জেলায় গড়ে ওঠে বেশ কয়েকটি পর্যটনস্পট। তার মধ্যে পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্ক, জেলা প্রশাসনের রাঙ্গামাটি পার্ক, সেনাবাহিনীর আরণ্যকসহ আরও বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন স্পট রয়েছে।
সুবলং ঝরনায় প্রতিবছর কয়েক লাখ দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সাজেক ভ্যালিতে পর্যটনস্পট গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে প্রতিবছরই এ জেলায় পাঁচ লক্ষাধিক দর্শনার্থী ভ্রমণ করেন। এতে প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অথচ এ এলাকায় পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বরাবরই উদাসীন জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে স্থানীয় পর্যটন জেলা পরিষদে হস্তান্তরের পর চুক্তি অনুযায়ী, পর্যটন করপোরেশনের আয়ের ১০ শতাংশ পরিষদকে দেওয়ার কথা রয়েছে। বিনিময়ে জেলা পরিষদও পর্যটন বিকাশে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করবে। পর্যটকদের আধুনিক চিত্তবিনোদনের সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। রাঙ্গামাটির জন্য নেওয়া হবে বিভিন্ন পরিকল্পনা। পর্যটনখাত বিকাশে জেলা পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর কিছুই হয়নি এখনো। গত সাত বছরে পর্যটন করপোরেশন কোনো টাকা দেয়নি জেলা পরিষদকে। একইভাবে জেলা পরিষদও কোনো অবকাঠামো তৈরিতে তেমন একটা আগ্রহ দেখায়নি।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, উচ্চ পর্যায়ে একটি চুক্তি হয়েছে। তবে চুক্তির শর্ত আসলে কী আমার এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। এটা পর্যটন করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই বলতে পারবেন। তবে আমি যতদূর জানি, লাভ হলে ১০ শতাংশ জেলা পরিষদকে দেওয়া হবে। জেলা পরিষদও অত্র এলাকার পর্যটনের বিকাশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করবে।
পর্যটন উদ্যোক্তা ও রাইন্যা টুগুনের পরিচালক ললিত সি চাকমা বলেন, ‘স্থানীয় পর্যটনের বিকাশে জেলা পরিষদের যে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সেভাবে আমি কোনো কিছু দেখছি না। তাদের ওপর আমাদের আশা অনেক বেশি, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তেমনটা দেখতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘গত পরিষদের পর্যটনের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তার সঙ্গে তিনবার আমি দেখা করতে চেয়েছি এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট কিছু কাগজপত্র তৈরি করেছিলাম। কিন্তু তার দেখা আমি পেলাম না। এভাবে পর্যটন উন্নয়ন তো সম্ভব না।’
জানতে চাইলে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটন হস্তান্তরিত বিভাগ হলেও এখনো আমরা পুরোপুরি এর দায়িত্ব পালন করতে পারছি না। এখনো প্রবিধান তৈরি করা হয়নি। প্রবিধানের কাজ চলছে। প্রবিধান তৈরি করা হয়ে গেলে স্থানীয় পর্যটনের বিকাশে আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
শংকর হোড়/এসআর/জেআইএম