তিমির কঙ্কাল প্রদর্শনী কেন্দ্র করতে চায় জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘর
হিমছড়ি সৈকতে পাওয়া মৃত তিমি দুটির কঙ্কাল নিয়ে কক্সবাজারে প্রদর্শনী কেন্দ্র করতে চায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। এটি বাস্তবায়নে কক্সবাজার সাগর পাড়ে ভাড়ায় সরকারি পরিত্যক্ত ভবন চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে চিঠি দিয়েছেন বিজ্ঞান জাদুঘরের মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুনীর চৌধুরী।
গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বরাবরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হিমছড়ি সৈকত থেকে উদ্ধার সেই মৃত তিমি দুটির কঙ্কাল নিয়ে একটি অস্থায়ী প্রদর্শনীর মাধ্যমে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে সামুদ্রিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণসহ ব্লু-ইকনোমির তথ্যাদি বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করতে চায় জাতীয় বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটি।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মুনীর চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিজ্ঞান মনষ্কতা সৃজনে প্রতিষ্ঠানটি বহুমাত্রিক ভূমিকা পালন করে আসছে। যেখানে বিজ্ঞানের সব শাখার বিষয়বস্তু নিয়ে সাতটি গ্যালারি রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনীর জন্য তাদের পাঁচটি মিওজু বাস, চারটি মুভি বাস, দুটি মোবাইল অবজারভেটরি বাস রয়েছে। তবে রাজধানীর বাইরে তাদের কোনো কেন্দ্র নেই। কিন্তু কক্সবাজার দেশের একটি পর্যটন কেন্দ্র ও সমুদ্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে এখানে বিজ্ঞান যাদুঘরের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র থাকা উচিত।
জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে।
এদিকে, গত ৯ এপ্রিল হিমছড়ি সমুদ্র সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের সঙ্গে ৪৪ ফুট দীর্ঘ একটি তিমির মৃতদেহ ভেসে আসে। পরদিন এর এক কিলোমিটার দক্ষিণে ভেসে আসে প্রায় একই আকারের আরও একটি তিমির মৃতদেহ। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বুরি) বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সাঈদ মুহাম্মদ শরীফের নেতৃত্বে বুরির বিজ্ঞানীরা মৃত তিমি দুটির নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর সেই নমুনা পরীক্ষার জন্য ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে (এনআইবি) পাঠানো হয়।
বুরি মহাপরিচালক ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, এনআইবিতে নমুনা পাঠানোর পর তারা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং মলিকিউলার বায়োটেকনোলজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কেশব চন্দ্র দাশ ও সিনিয়র বিজ্ঞানী ড. ছলিম উল্লাহর নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি ডেডিকেটেড বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেন। সেই টিম গত জুলাই মাসে পরীক্ষার রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বুরির কাছে পাঠায়।
তবে, গত ৯ ও ১০ এপ্রিল হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা মৃত তিমি দুটির জাত ও লিঙ্গ নিয়ে কক্সবাজারের মৎস্য বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। পরে বিজ্ঞানীরা তিমি দুটো ব্রাইড’স হোয়েল বাবলিন তিমি বলে একমত হলেও লিঙ্গ নিয়ে একমত হতে পারেননি।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসা তিমি দুটির প্রথমটি পুরুষ এবং দ্বিতীয়টি স্ত্রী। কিন্তু বিএফআরআই’র সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক মনে করেন, ঠিক উল্টোটি; মানে প্রথমটি স্ত্রী এবং দ্বিতীয়টি পুরুষ। আবার সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান উভয় তিমি পুরুষ লিঙ্গের বলে মনে করেন।
এদিকে, বুরি মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের কাছে মৃত তিমি দুটির টিস্যু নমুনা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এনআইবি। তাতে বলা হয়েছে, হিমছড়ি সৈকত থেকে উদ্ধার মৃত তিমি দুটি বলিনো পেট্রাইডেনি প্রজাতির। আর তিমি দুটির প্রথমটি স্ত্রী এবং দ্বিতীয়টি পুরুষ।
সায়ীদ আলমগীর/এমআরআর/জিকেএস