কুড়িগ্রামে নার্সদের অবহেলায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৫:৫২ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের নার্সদের অবহেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে মৃত দুই নবজাতকের স্বজনসহ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের রোষানলে পড়তে হয় দায়িত্বরত নার্সসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গেলে ভুক্তভোগী স্বজন ও অন্যান্য শিশুদের অভিভাবকরা নার্সদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকেন। তারা অভিযুক্ত নার্সদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।

মৃত দুই নবজাতক হলো জেলা শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছয়ানিপাড়ার দিলীপ চন্দ্র রায়ের মেয়ে এবং জেলার রাজীবপুর উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) তারা জন্মগ্রহণ করে।

মৃত এক নবজাতকের বাবা দিলীপ চন্দ্র রায় জানান, শনিবার জেনারেল হাসপাতালে তার স্ত্রী অঞ্জনা একটি মেয়ে বাচ্চা প্রসব করেন। স্বাভাবিক প্রসব হলেও জন্মের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছে জানিয়ে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এরপর তাকে ইনজেকশন ও স্যালাইন দেওয়ারও ব্যবস্থাপত্র দেন দায়িত্বরত চিকিৎসক।

দিলীপ রায় অভিযোগ করে বলেন, ওষুধ আর স্যালাইন এনে বাচ্চাকে দেওয়ার জন্য নার্সদের অনুরোধ করলেও তারা কথা শোনেননি। তারা রুমে বসে মোবাইলে লুডু খেলেন, ফেসবুক চালান। এখনো স্যালাইন অমনি (অব্যবহৃত) পড়ে আছে। সোমবার দুপুরে বাচ্চার নাক থেকে অক্সিজেনের লাইন খুলে গেলে তা ঠিক করার জন্য নার্সদের ডাকি। কিন্তু তারা ধমক দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাটা মারা যায়।

বাচ্চার মৃত্যুর জন্য নার্সদের অবহেলাকে দায়ী করেন ভুক্তভোগী এই বাবা।

অপর মৃত শিশুর বাবা রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, বাচ্চাকে চিকিৎসা সেবা, ওষুধ দিতে ডাকলে নার্সরা আসেন না। চিকিৎসার অভাবে কখন বাচ্চা মারা গেছে আমরা টেরও পাইনি। তারা (নার্সরা) মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। রোগীর সেবা করতে তাদের অনীহা।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে রবিউলের বাবা (মুত শিশুটির দাদা) ফুল মিয়া বলেন, বাচ্চা মারা যাওয়ার পর নার্সরা আমাদের বলে বাচ্চা রংপুর নিয়া যাইতে হবে। এরা ইচ্ছা কইরা আমার নাতনিকে মাইরা ফেলাইলো।

ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, নার্সরা ডিউটি রুমে মোবেইলে লুডু খেলে। তারা ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। কোনো সমস্যার কথা বললে অভিভাবকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকি দেন।

এদিকে, শিশু ওয়ার্ডে বিকেলের শিফটে দায়িত্বরত নার্স তুলশি রানী ও উর্মিলা শাহা এসব অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তারা বলেন, ঘটনার সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা ডিউটি শেষে চলে গেছেন।

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ কাকলী বেগম বলেন, যে শিশু দুটি মারা গেছে তাদের অবস্থা এমনিতেই খারাপ ছিল। এরপরও নার্সদের কোনো অবহেলা থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ৪৮ রোগীর বিপরীতে ভর্তি আছে ১১৮ শিশু। নার্স সঙ্কট থাকায় অতিরিক্ত সংখ্যক রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে ডিউটিতে কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সদের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে গেম খেলা ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্ড ইনচার্জ বলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় রোগীর সেবা না দিয়ে মোবাইলে গেম খেলার অভিযোগ সত্যিই অমানবিক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে ডিউটিরত অবস্থায় স্মার্টফোন ব্যবহারে বিধি নিষেধের সুপারিশ করবো।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ লিংকন বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর শিশু ওয়ার্ডে গিয়েছি। শিশু দুটির শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বাচ্চা দুটিকে রংপুরে নিয়ে যাওয়ার জন অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনরা বিষয়টি আমাকেও বলেছেন। প্রয়োজনে আমি তদন্ত কমিটি করে দেব। সেবা দিতে গিয়ে যদি তারা রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে সেটা কাম্য নয়। সেবা ও ভাষাগত কিংবা ব্যবহারগত বিষয়ে তারা যদি কোনো দায়িত্বে অবহেলা করে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মো. মাসুদ রানা/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।