ধর্ষণের পর গৃহকর্মীকে ন্যাড়া করে দিলেন স্ত্রী, গ্রেফতার স্বামী

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক সাভার (ঢাকা)
প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

রাজধানীর অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর নির্যাতন ও চুল কেটে নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন এক গৃহকর্মী।

ভুক্তভোগী গৃহকর্মী ও তার পরিবারের অভিযোগ, ওই বাসায় কাজ করার সময় তাকে ধর্ষণ করেন বাড়ির মালিক। এরপর মালিকের স্ত্রী ঘটনা দেখে ফেলার পর গৃহকর্মীকে আটকে রেখে বেধরক মারধর করে। এমনকি তাকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ পরিবারটির।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভুক্তভোগীকে শরীরে জখমের চিহ্ন ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায়।

গত মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ার ধামসোনা ইউনিয়নের গাজীরচট এলাকার সোনিয়া মার্কেটের মালিকের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী লিপি বেগম আশুলিয়া থানার ধামসোনা ইউনিয়নের গাজীরচট সোনিয়া মার্কেট এলাকার বাসিন্দা।

ভুক্তভোগী নারী জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে কাজের জন্য তাকে ডেকে পাঠান দেলোয়ার ও লিপি দম্পতি। বাসার মেঝে ধোয়া-মোছার করার সময় বাড়ির মালিক দেলোয়ার ফাঁকা বাসায় ভুক্তভোগীর মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করেন। হঠাৎ লিপি বেগম সেখানে উপস্থিত হলে উল্টো ভুক্তভোগীকেই চর-থাপ্পর মারতে থাকেন৷ তার কোন কথাই শোনেনি মালিকের স্ত্রী। পরে লিপি ও তার দেবরের স্ত্রী তাকে ওড়না দিয়ে বেঁধে ফেলেন। দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত এ অবস্থায় তাকে আটকে রেখে লাঠি দিয়ে বেধরক পিটিয়ে জখম করা হয়। প্রথমে কেঁচি ও পরে ব্লেড দিয়ে তার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বাড়ির মালিকের এক স্বজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে বাড়িতে পাঠায়৷ এসময় তিনি চিকিৎসার জন্য ভুক্তভোগীর হাতে আড়াই হাজার টাকা দিতে চাইলেও সে টাকা কেড়ে নেন লিপি বেগম।

ঘটনার রাতেই আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে আটক না করেই চলে আসে। পরদিন বুধবার সকালে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন ওই গৃহকর্মী।

ভুক্তভোগীর স্বামী জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রীকে কাজের কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। তখন মালিকের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। বাড়ির মালিক দেলোয়ার আমার স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন৷ পরে বাড়ির মালিকের স্ত্রী আমার স্ত্রীকে বেঁধে মারধর করেন এবং সন্ধ্যার দিকে রিকশা করে পাঠিয়ে দেন। সেদিন থানায় গিয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নাকি বাড়ির মালিককে পায়নি। গতকাল বুধবার দেলোয়ারের বাড়িতে পুলিশ গিয়ে আমাদের তলব করে। আমরা সেখানে গেলে আমাদের টাকা দিয়ে মিটমাট করতে চান। প্রথমে ১৫ হাজার টাকা চিকিৎসার জন্য দিতে চাইলেও পরে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা জাগো নিউজকে বলেন, ভুক্তভোগী নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। যেগুলো মারধরের। রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির গেট তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। মুঠোফোনে দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সেদিন এক নারী কাজ করতে আসছিলো। আমি তখন নিচে ছিলাম। আমার বউ আমারে খুব সন্দেহ করে। ওই কামের নারীকে অযথাই বাইন্ধ্যা মারধর করছে। গতকাল (বুধবার) দুপুরে থানা থেকে লোক আসছিলেন। ওই নারীকে চিকিৎসার জন্য ৮ হাজার টাকা দেয়া হইছে। কইছি, লাগলে আরও দিমু। তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউনুছ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ওই গৃহকর্মী বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন। আমি কয়েকবার গিয়ে বাড়ির মালিককে পাইনি। তিনি বাসায় ছিলেন না। যদিও ভুক্তভোগী কোনো ধর্ষণের অভিযোগ করেননি। তবে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে টাকা দিয়ে মিটমাটের চেষ্টা করেছেন কি না, জানতে চাইলে অস্বীকার করেন এসআই ইউনুছ আলী।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এ বিষয়ে এসআই ইউনুছের সঙ্গে কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় তিনজনের নামে মামলা হয়েছে। এক নম্বর আসামি দেলোয়ার গ্রেফতার হয়েছে। কাল (শুক্রবার) তাকে আদালতে পাঠানো হবে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

একই তথ্য জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম।

আল-মামুন/এমকেআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।