বংশাই-লৌহজংয়ের তীব্র ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন
কমছে বংশাই ও লৌহজং নদীর পানি। এতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌর এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, রাইসমিল ও মসজিদসহ জনপথ। এরইমধ্যে মির্জাপুর পৌর এলাকার দুই নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী দক্ষিণ পাড়া ও চার নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী পূর্বপাড়া (সওদাগড়পাড়া) এবং বাওয়ার কুমারজানী উত্তরপাড়ার প্রায় শতাধিক বাড়ি, শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভঙনঝুঁকিতে পুষ্টকামুরী পূর্বপাড়া (সওদাগড়পাড়া) গ্রামের মসজিদ।
নদীর পাড় ভাঙনরোধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানালেও কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লৌহজং নদীর ভাঙনে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী গ্রামের ফজলু মিয়া, লতিফ সিকদার, জিয়ার উদ্দিন, সোনা মিয়া, যহের আলী, ফজল মিয়া, আনু মিয়া, খবির উদ্দিন, তারা মিয়া, বারেক মিয়া, সুরুজ, ফিরোজ, ফরিদ, আলম, সুজন, ফজল মিয়া, মুক্তি মিয়া, তাইজুল সিকদার, ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুষ্টকামুরী পূর্বপাড়া (সওদাগড়পাড়া) গ্রামের রফিকুল ইসলাম স্বাধীন, শফিকুল ইসলাম, মাসুম, মজিবুর রহমান, মিঠু মিয়া, মোফাজ্জল মিয়া, শহর আলী ফকির, মোয়াজ্জেম, সাগর, দুলালী, ভুট্টু, লিটন, তোফাজ্জল, জাফর, জাবেদ, লিটন, বাবুল, ফিরোজ, রবিউল, দেলোয়ার, হযরত, নজরুল, মোছান, আহসানসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তির বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
পুষ্টকামুরী গ্রামের ফজলু মিয়া জানান, তার জীবনের উপার্জন দিয়ে একটি একতলা ভবন করেছিলেন। লৌহজং নদীর অসমেয়র ভাঙনে ভবনটি হুমকির মুখে পড়েছে।
নদী ভাঙনের কবলে পড়া ওই পাড়ার বাসিন্দা মজিবর রহমান জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করছে। কিন্তু তার বাড়িটি ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে গেলো। ঘরবাড়িসহ তার প্রায় কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে চলে গেছে।
তাকেসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর তোলার জন্য সরকারিভাবে জমি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
ওই পাড়ার বাসিন্দা বাবুল বলেন, প্রতি বছর আমরা নদী ভাঙনের কবলে পড়ি। কিন্তু আমদের সহায়তায় কেউ এগিয়ে আসে না। আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই রক্ষায় কোনো কাজ হচ্ছে না।
রাইসমিলের মালিক জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর বর্ষা এলেই আতংকে দিন কাটে। ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা না হলে মিলটি রক্ষা করা যাবে না।
এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে আছে বংশাই নদীর ওপর ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আলহাজ মো. একাব্বর হোসেন সেতু। সেতুর উত্তর ও দক্ষিণ পাশে শুকনো মৌসুমে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা এবং বর্ষা মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলে। এসব মাটি ও বালু লুটকারীদের প্রতিহত করা না গেলে সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশংকা স্থানীয়দের।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ওই এলাকার নদী ভাঙন সম্পর্কে পাউবোকে অবহিত করা হবে। তারা এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। একাব্বর হোসেন সেতু যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সেদিকে নজর রাখা হবে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙনের খবর জেনেছেন। বরাদ্দ না থাকায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তবে লৌহজং নদীর পুষ্টকামুরী এলাকার ভাঙনের খবর পাওয়া যায়নি। ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় এমপির পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এস এম এরশাদ/এসজে/জেআইএম