করোনায় চিত্রশিল্পী হয়ে উঠলেন কলেজছাত্র জয়
মহামারি করোনার কারণে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নেই কোনো পরীক্ষাও, তাই পড়ালেখার চাপও কম। অলস সময় কাটানোর জন্য শখেরবসে শুরু করেন ছবি আঁকা। দীর্ঘ সময়ে ছবি আঁকতে আঁকতে চিত্রশিল্পী হিসেবে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছেন বিষ্ণু সিকদার জয়।
বিষ্ণু ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়নের তালগাছিয়া গ্রামের দেবাংশু সিকদারের ছেলে।
তিনি জানান, ২০০২ সালের ১ অক্টোবরে জন্ম। আওড়াববুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৪২ পেয়ে পিইসি, সোনার বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে জিপিএ ৪.৬০ ও এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
বাবার ঢাকায় চাকরির সুবাদে বাড্ডা এলাকায় ন্যাশনাল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। কলেজের পাঠদান ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ বছরই জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
তিনি জানান, ছোটবেলায় চারুকলা পরীক্ষার সময় দু-একটি চিত্র এঁকে জমা দিতাম। তাছাড়া কখনো চিত্রকর্মে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বাসায় বসে ছবি আঁকা শুরু হয়। বিভিন্ন দৃশ্য আঁকতে আঁকতে যখন নিজের সাফল্য মনে হতে শুরু হয় তারপর বিভিন্ন খ্যাতনামা মনীষী, কবি, সাহিত্যক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছবি আঁকা।
আঁকার পরে ছবির সঙ্গে যখন হুবহু মিলে যায় তখন খুব নিজে নিজেই আনন্দ পাই। নিজের অঙ্কিত ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করা শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন তো আছেই, বিশিষ্ট লোকজনেও ছবি আঁকতে অনুরোধ জানান। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান আমাকে একজনের মাধ্যমে ছবি এঁকে দিতে বলেন। তার ছবি আঁকলে এরপর মুক্তিযুদ্ধের সাব-সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের মেয়ে তার ছবি আকার অনুরোধ জানান।
তাকে ছবি এঁকে দিলে সেই নকশা অনুযায়ী আবার কাঠে খোদাই করে সংরক্ষণ করেন। এখন বেশ অর্ডার পাচ্ছি ছবি আঁকার। ছবি প্রদর্শনীর জন্য ফেসবুক থেকে চিত্রশিল্পী হিসেবে ব্যাপক সাড়া জুগিয়েছেন।
জয় জানান, বর্তমানে ইন্টারনেটে পেন্সিল স্কেচের কারণে হাতে ছবি আঁকা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ফলে ছবি আঁকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। অথচ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনসহ বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা নিজ হাতে ছবি এঁকেই বিখ্যাত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিজ হাতে ছবি এঁকে প্রতিভা বিকশিত করারও অনুরোধ জানায় বিষ্ণু সিকদার জয়।
কাঁঠালিয়ার শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন বলেন, ইউনিয়েনর তালগাছিয়া গ্রামের দেবাংশু সিকদারের ছেলে বিষ্ণু সিকদার জয় নিজে যেভাবে অলস সময়ে ছবি এঁকে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, সেভাবে শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে ছবি এঁকে প্রতিভা বিকশিত করতে পারে।
তিনি বলেন, তার প্রতিভায় আমিসহ এলাকাবাসী গর্বিত। কোনো পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন হলে আমি এগিয়ে আসব। এভাবে প্রতিটা ঘরে প্রতিবাভান সন্তান জন্মগ্রহণ করুক এ প্রত্যাশা আমার। নিম্নবিত্ত পরিবারে প্রতিভা বিকাশে কোনো বাধা নয় শুধু অধ্যাবসায় থাকলেই এগিয়ে যাওয়া যায়।
এমআরএম/এমকেএইচ