দুই ধারে ‘দুই সেতু’ যেন ভেসে উঠেছে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১
গুলুডোবা নদীর ওপর নির্মিত সেতু এখন পড়ে আছে স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক হয়ে

অডিও শুনুন

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার ঘোষের পাড়া ইউনিয়নের পাঠানপাড়া-ছবিলাপুরে গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে যমুনার শাখা গুলুডোবা নদী। দুই দশক আগে এই নদীর ওপর ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছিল একটি সেতু। নদীভাঙন আর সংশ্লিষ্টদের অবহেলায় সেই সেতু এখন পড়ে আছে স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক হয়ে।

উপজেলার আট গ্রামের মানুষের দুর্দশা দূর করার জন্য সেতুটি বানানো হলেও এখন এর দু’পাশে নেই সংযোগ সড়ক। নেই চলাচলের কোনো উপায়। সেতুটির মাঝখান দিয়ে ভেঙেও গেছে। অর্থাৎ এ সেতু এখন হয়ে পড়েছে অকেজো। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকায়ই চলাচল করতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। ১৫ বছর আগে সংযোগ সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আর কেউ এই সেতুর দিকে ফিরেও তাকায়নি।

jagonews24গুলুডোবা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝখান দিয়েও ভেঙে গেছে

মেলান্দহ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০১-২০০২ অর্থবছরে গুলুডোবা নদীর ওপর ৯৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। সেতুটি হয়ে ওঠে মেলান্দহের আমির্ত্তী, চরসগুনা, বীরসগুনা, চাড়ালকান্দি, কাহেতপাড়া, গুনারীতলা, জাঙ্গালিয়াসহ প্রায় আট গ্রামের মানুষের চলাচলের প্রধানতম মাধ্যম। তবে গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের স্বস্তির যাতায়াতের সুযোগ খুব বেশিদিন থাকলো না। বছর পাঁচেকের মাথায়ই গুলুডোবা নদীর ভাঙন কেড়ে নেয় সেতুটির সংযোগ সড়ক। স্থল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেতুটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠানপাড়া-ছবিলাপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা গুলুডোবা নদীতে নিঃস্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ভেঙে পড়েছে সেতুর মাঝের অংশও। নদী পারাপারে বিকল্প রাস্তা না থাকায় তীরের ফসলি জমি মাড়িয়ে যাতায়াত করছেন লোকজন। সেতু না থাকায় এখন ওই আট গ্রামের বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

jagonews24১৫ বছর আগে সংযোগ সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আর কেউ এই সেতুর দিকে ফিরেও তাকায়নি

স্থানীয় মো. মাসুদ মিয়া, সবুর, কুদ্দুসসহ অনেকের অভিযোগ, ভাঙা সেতুর কারণে প্রতিদিন নদীর তীর দিয়ে ফসলি জমি মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয় তাদের। বন্যার সময় নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। পাঁচ বছর আগে ভাঙা সেতুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকা ডুবে একজন মারাও যান।

কৃষক আব্দুর রহিম, রুস্তম, সালাম বলেন, উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মালামাল আনা-নেওয়া করতে আমাদের প্রতিনিয়তই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কপথে অনেকটা রাস্তা ঘুরে বাজারে নিতে হয়। এতে আমাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে।

jagonews24গুলুডোবা নদীতে নিঃস্বের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেতু

দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করে স্থানীয় ঘোষের পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুর রহমান বলেন, আশপাশের আট গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে সেতুটি সংস্কারের অভাবে। যত তাড়াতাড়ি সেতুটি সংস্কার করা হবে তত তাড়াতাড়ি এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মাজেদুর রহমান জানান, উপজেলার একশ’ মিটারের নিচে যেসব ভাঙাচোরা সেতু রয়েছে সেসব সেতু ইতোমধ্যে মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব উপজেলার মেরামতযোগ্য সব সেতুর মতো এই সেতুও মেরামত করা হবে।

এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।