সংকটে ভুগছে শায়েস্তাগঞ্জের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় নানা সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কেন্দ্রগুলো। এতে সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট একাধিক পদ শূন্য থাকায় উপজেলার দুটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গত একবছরে একটিও নরমাল ডেলিভারি হয়নি। এতে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা অস্ত্রোপচারে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে একজন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, ফার্মাসিস্ট, আয়া ও নিরাপত্তা প্রহরীর পদ থাকে। তবে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নুরপুর ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে বাকি পদগুলোতে লোকবল থাকলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না সেবাগ্রহীতারা। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এখানকার পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা আবাসিক ভবনে না থাকায় নরমাল ডেলিভারির (স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মদান) সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। এ কেন্দ্রে গত এক বছরে একটিও নরমাল ডেলিভারি হয়নি। এছাড়া ভবনের ছাদ দিয়ে পানি পড়ায় দুটি কক্ষ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আবাসিক ভবনে যাওয়ার রাস্তাও মেরামত করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরপুর ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিষ্ণুপদ রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট নেই। ভবনটিও জরাজীর্ণ। কিছুদিন আগে মেরামত করা হলেও দুটি রুমের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। যে কারণে ওই রুমগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়।
এদিকে, শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থা আরও বেহাল। এ কেন্দ্রে নেই পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা, ফার্মাসিস্ট ও নিরাপত্তা প্রহরী। জনবল সংকটের কারণে কেন্দ্রটি প্রায়ই বন্ধ থাকে।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ। আবাসিক ভবনের বেহাল অবস্থা হওয়ায় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সেখানে থাকেন না। অনেকটাই পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে আবাসিক ভবনটি।
জানতে চাইলে শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিনিউটি মেডিকেল অফিসার ডা. নুসরাত জাহান বলেন, এ কেন্দ্রটির আবাসিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় এখানে থাকা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রটি বন্ধ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। আর পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদটি অনেকদিন ধরে শূন্য। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে দুইদিন একজন এখানে এসে কাজ করেন। জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রওশন আরা বেগম বলেন, উপজেলার দুটি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রই নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে আছে। কেন্দ্রগুলোর সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করি, খুব দ্রুত এর সমাধান হবে।
গত এক বছরে কেন্দ্রগুলোতে একটিও নরমাল ডেলিভারি না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত জনবল সংকটের কারণেই পারা যাচ্ছে না। নুরপুরে আবাসিক ভবন থাকলেও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা এই ভবনে না ওঠায় এবং শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদ শূন্য থাকায় নরমাল ডেলিভারি করা সম্ভব হচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার এ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমআরআর/এইচএ/জেআইএম