জমানো কয়েনে সেই মনি-মুক্তার নতুন জামা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১০:৫৯ এএম, ২২ আগস্ট ২০২১

আজ থেকে ১২ বছর আগে মাথা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয় মনি-মুক্তা। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েন শিশু দুটির বাবা-মা। তবে ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে সফল অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা হয় মনি-মুক্তা। যা বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবায় এক নতুন ইতিহাস। আজ সেই মনি-মুক্তার জন্মদিন। তারা এখন ১৩ বছরে পা দিয়েছে।

জন্মদিন উপলক্ষে সন্তানদের জন্য মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখা কয়েন দিয়ে নতুন জামা কিনে দিয়েছেন বাবা জয় প্রকাশ পাল।

মনি-মুক্তা এখন বাড়ি থেকে কিছু দূরে ঝাড়বাড়ী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। মহামারির কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় আর সবার মত পিএসসি পরীক্ষায় অটোপাস পেয়েছে। তবে জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষায় অটোপাস ভালো লাগেনি। তারা চেয়েছিল পরীক্ষা দিতে।

jagonews24

মনি-মুক্তার বাবার মোবাইলে যখন কল দিয়ে কথা বলতে চাওয়া হয়, তখন কে আগে কথা বলবে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে মোবাইলে নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। শেষপর্যন্ত প্রথমে মনি পরে মুক্তা কথা বলে। তারা দুজনেই আশীর্বাদ চেয়ে বলে, ‘আমাদের জন্মদিনে আসবেন না?’

তারা জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে স্কুলে যেতে পারছে না, এ জন্য তাদের মন খারাপ। তবে মাঝে মধ্যে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য স্কুলে যেতে হয়। এভাবেই এখন তাদের পড়ালেখা চলছে।

মনি-মুক্তা জানায়, তারা এবার জন্মদিনে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবে ভগবান যেন পৃথিবী থেকে করোনা তুলে নেয়। সেই সঙ্গে তারা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ জানায়।

শিশু দুটির মা কৃষ্ণা রানী বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব পরিবারে জোড়া লাগা শিশু জন্ম নেওয়া কতটা বিপদের তা শুধু আমরাই বুঝতে পারি। মনি-মুক্তা যখন জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়, তখন আমরা দিশাহারা হয়ে পড়ি। আবার আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের খারাপ কথা! সব যন্ত্রণা কাটিয়ে যখন মনি-মুক্তাকে আমাদের মাঝে সুস্থ অবস্থায় পেলাম, তখন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। যাদের আমরা না পারছিলাম ফেলে দিতে, না পারছিলাম বাঁচিয়ে রাখতে। আর এখন সেই মনি-মুক্তাই আমাদের ঘরে অফুরন্ত আনন্দের উৎস। তাই শত অভাবের মধ্যেও সেই সময়ের কষ্টগুলোকে ভুলে যেতে আমরা মনি-মুক্তার জন্মদিন পালন করি।’

মনি-মুক্তার বাবা জয় প্রকাশ বলেন, ‘করোনার কারণে সংসারে অভাব অনটন বেড়ে গেছে। কিন্তু মনি-মুক্তার জন্মদিন পালন হবে না এটা পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারি না। তাই আগের প্রস্তুতি হিসেবে মুদি দোকানে বেচাকেনার লাভ থেকে একটু একটু করে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখা কয়েন দিয়ে মেয়েদের জন্য জামা কিনেছি।’

জয় প্রকাশ বলেন, ‘মনি-মুক্তা দুজনেরই একই রঙের জামা পছন্দ। আলাদা রঙের জামা কিনলে কে কোনটা নেবে এটা নিয়ে ঝগড়া বেধে যায়। তাই তাদের জন্য একই রঙের জামা কিনেছি।’

jagonews24

এদিকে মনি-মুক্তার বড় ভাই সজল কুমার পাল ও বোন দিশারী রানী পাল বারান্দা সাজানোর জন্য বেলুন ও জরি কিনে এনেছে। কেকেরও অর্ডার দেয়া হয়েছে। যতটা সম্ভব তাদের জন্য ভালো খাবার রান্না করবেন মা কৃষ্ণা রানী।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পালপাড়ায় জয় প্রকাশের বাড়ি। ২০০৯ সালে ২২ আগস্ট কৃষ্ণা রানী জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম দেন দুই মেয়ে শিশুকে। জন্মের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নাম রাখে মনি ও মুক্তা। জন্মের ছয় মাস পর ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মনি-মুক্তাকে আলাদা করা হয়।

এমদাদুল হক মিলন/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।