ভরা মৌসুমেও মাছের আকাল ভৈরবের আড়তে
প্রায় তিন দশক আগে ১৯৮৯ সালে ভৈরবের পলতাকান্দায় মাটি ভরাট করে গড়ে ওঠে মাছের আড়ত। ৬৩০ একর জমির ওপর মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা বাজারে প্রায় দুশ’র বেশি মাছের আড়ত রয়েছে। তবে দিনে নয় এ বাজার জমে রাতে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় শুরু হয়ে বেচাকেনা চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
ঐতিহ্যবাহী এই বাজারে বর্ষা মৌসুমেও মাছ নেই বললেই চলে। ভরা মৌসুমেও চলছে মাছের আকাল। নানা প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থায় অনেকে গুটিয়ে নিয়েছেন ব্যবসা। বেকার হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক।
মৎস্য বাজার সমিতির হিসাব অনুযায়ী, বাজারে মোট দোকানের সংখ্যা দুশ’র বেশি হলেও মাছ ওঠে ৫০-৬০টিতে। যেসব দোকানে মাছ আসে সেগুলোও আগের তুলনায় অনেক কম।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বাজারের বিশেষত্ব হলো হাওরের মিঠা পানির মাছ। বিশেষ করে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, মিঠামইন, নিকলী, ইটনা; হবিগঞ্জের লাখাই, সাল্লা, দিরাই, আজমিরীগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের মাছ আসে এ বাজারে।
আইড়, বোয়াল, বাইম, রুই, তারা বাইম, চিংড়ি, গুলসা, বাইল্লা, টেংরা, শিং, কৈ, বইছা, চান্দা, কাঁচকি মাছের জন্য সুনাম রয়েছে ভৈরবের আড়তের। এ বাজার থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও ইউরোপসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি করা হয়।
যমুনা মৎস্য আড়তের মালিক ও মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক ফয়সাল মোল্লা বলেন, ‘ভৈরবের এই রাত্রিকালীন বাজারে সাধারণত নদীর মিঠাপানির মাছ সবচেয়ে বেশি আসে। এখানকার দেশীয় প্রজাতির নানাবিধ মাছ রাজধানীসহ দেশের অনেক জায়গায় যায়। রপ্তানিও করা হয়।’
আদর্শ মৎস্য আড়তের মালিক মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এই বাজারে মাছের ব্যবসা করছি। প্রথম দিকে এ বাজারে প্রতিদিন দুই কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হতো। কিন্তু দিন দিন আড়তগুলোর জৌলুস কমে যাচ্ছে। নদীতে মাছ কম থাকার কারণে বাজারে মাছের আমদানি কম হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সঠিক সময়ে হাওরে পানি কম আসা, অপরিকল্পিতভাবে খাল-বিল ভরাট করা, বড় বড় বিলের সঙ্গে মেঘনার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, মেঘনায় পর্যাপ্ত পোনা অবমুক্ত না করার কারণে মাছ কম আসছে। এছাড়া হাওর থেকে আহরিত মাছের অধিকাংশ এখন বিকল্প পথে সরাসরি ঢাকায় চলে যায়। জেলেরা লাখ লাখ টাকা দাদন নিয়েও এখন ভৈরবে মাছ নিয়ে আসেন না। ফলে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় দিন পার করছে।’
এমএইচআর/এসএইচএস/জিকেএস