৮ বছর ধরে শিকলে বাঁধা রেনুকার জীবন
অডিও শুনুন
একসময় স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি সবই ছিল। লেখাপড়াতেও ছিলেন মেধাবী। কোরআন শরীফও পড়তে পারতেন। সেই সুস্থ, স্বাভাবিক ও মেধাবী মেয়েটি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন।
মেয়েটির নাম রেনুকা। তিনি সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার নুরনগর গ্রামের রুস্তম আলীর মেয়ে। আট বছর আগে লেখাপড়া করা অবস্থায় অসুস্থ হলে দিনমজুর বাবা সঠিক চিকিৎসা করাতে পারেননি। পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রেনুকা। তখন থেকেই জীবন বাঁধা শেকলে। কয়েক বছর স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করালেও পরে আর তার সামর্থ্য হয়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কামারখন্দ উপজেলার সত্তরোর্ধ্ব দিনমজুর রুস্তম আলী। তিনি চার কন্যাসন্তানের জনক। গ্রামের মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। রেনুকার বয়স যখন ১৪ বছর তখন তিনি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। আশা ছিল ছোট মেয়ে রেনুকাকে লেখাপড়া করে মানুষ করবেন। তবে সেই আশায় গুড়ে বালি! লেখাপড়া করা অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রেনুকা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেই হিমশিম খেতে হয় দিনমজুর বৃদ্ধ বাবাকে। অর্থাভাবে একসময় থেমে যায় চিকিৎসা।
রেনুকার বাবা রুস্তম আলী বলেন, ‘মেয়েটির এমন সমস্যায় আট বছরেও কোনো জনপ্রতিনিধি সহায়তার হাত বাড়াননি। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েটি এখন আমার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য (মেম্বার) আব্দুস সাত্তার বলেন, বড় কোনো বরাদ্দ না থাকায় রেনুকার পরিবারকে কোনো সহায়তা করা হয়নি। তবে পরিবারটিকে সাধ্যমতো সরকারি ছোট ছোট সুবিধাগুলো দেয়া হয়েছে।
কামারখন্দ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সবুজ আলী জানান, রেনেকার পরিবারকে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে সাহায্য করা হবে। এজন্য তাদেরকে মেয়েটিকে অফিসে আনার জন্য বলা হয়েছে। অফিসে এলে মেয়েটিকে দেখে কোনো একটি ক্যাটাগরিতে ভাতার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে।
কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, রেনুকাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য সার্বিক সহযোগিতার জন্য রোগীর পরিবারের সঙ্গে ইউপি সদস্যকে পাঠানো হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এসআর/জিকেএস