সিদ্ধিরগঞ্জে আজও হয়নি প্রধান তিন দলের কার্যালয়

এস কে শাওন এস কে শাওন , উপজেলা প্রতিনিধি, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৮:৩৭ এএম, ১১ আগস্ট ২০২১

স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দলীয় কার্যালয় গড়তে পারেনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ প্রধান তিন রাজনৈতিক দল। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রম থাকলেও কার্যালয় না থাকায় হচ্ছে না সমন্বয়, যা স্বীকার করছেন দলগুলোর নেতারাও।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জে থানা আওয়ামী লীগ মূলত বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বাবা প্রয়াত এ কে এম সামসুজ্জোহা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাবা প্রয়াত আলী আহমদ চুনকার নেতৃত্বে চলছিল। তাদের প্রয়াণের পর উত্তরসূরিরাই নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনের। সেলিনা হায়াৎ আইভীর কিছু নেতাকর্মী থাকলেও এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ শামীম ওসমানের অনুসারীর।

থানা আওয়ামী লীগ মাঝে দুটি জায়গায় ভবন নির্মাণ করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে এলেও তা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে ভাঙা পড়ে। সেই থেকে আর কোনো কার্যালয় হয়নি সিদ্ধিরগঞ্জে।

থানা আওয়ামী লীগের কমিটিও হচ্ছে না দীর্ঘদিন। সিদ্ধিরগঞ্জে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২১ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এর সভাপতি করা হয় আলহাজ মজিবুর রহমানকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন হাজি ইয়াছিন মিয়া। তিন বছর মেয়াদি সেই কমিটিই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে।

দলীয় কার্যালয় না থাকায় কর্মসূচি পালনে ব্যাঘাত হচ্ছে স্বীকার করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে আমাদের সভাপতির বাসভবনে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির অবস্থাও তথৈবচ। এখানেও তাদের নেই দলীয় কার্যালয়। মাঝে কিছুদিন সিদ্ধিরগঞ্জের রজ্জব আলী সুপার মার্কেটে ফ্লোর ভাড়া নিয়ে কার্যালয় বানিয়েছিল নারায়ণগঞ্জ বিএনপি। সেখানেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কিছু কার্যক্রম চলেছিল। পুলিশের একাধিক অভিযানের পর এ কার্যালয়ও ছেড়ে দেয়া হয়।

বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে দলের তৎকালীন সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের অনুসারীরা দলীয় কার্যক্রম চালিয়েছিলেন তার জিআর টেক্সটাইল মিলে। পরে দলীয় কার্যক্রমগুলো পৃথকভাবে গিয়াস উদ্দিন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সফর আলী ভূঁইয়া ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদের প্রতিষ্ঠান, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট বা কোনো ভবনে চলত।

সংগঠনটির একাধিকবার আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হচ্ছে না দীর্ঘদিন। অন্তঃকোন্দল থাকায় নেতাকর্মীরাও হতে পারছেন না ঐক্যবদ্ধ। যদিও বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি সিদ্ধিরগঞ্জে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

এখানে বিএনপির সর্বশেষ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২০১২ সালের ৭ এপ্রিল। তিন মাস মেয়াদি সেই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সফর আলী ভূঁইয়াকে। সদস্য সচিব হন অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। সেই কমিটির পর আর নতুন কোনো কমিটি হয়নি সিদ্ধিরগঞ্জে। মামুন মাহমুদ বর্তমানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব।

কার্যালয় এবং দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় দলীয় কার্যক্রম চালাতে ব্যাঘাত ঘটছে স্বীকার করে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, অচিরেই আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটি গঠন করবো। তাছাড়া দলীয় কার্যালয় নিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করা হবে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টির নিজস্ব কার্যালয়ও আজ পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি। মোহাম্মদ আলী নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তার সিদ্ধিরগঞ্জ পুলস্থ দলিল লেখক কার্যালয়ে দলীয় কর্মসূচি পালিত হতো।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা জাতীয় পার্টি এখানে কখনো কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। সিদ্ধিরগঞ্জে তেমন প্রভাবশালী বলয় তৈরিতে বরাবরই ব্যর্থ হয়েছে এ দল।

জাতীয় পার্টি সিদ্ধিরগঞ্জে ২০১৯ সালের ৬ মে তিন বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সভাপতি করা হয় কাজী মোহাম্মদ মহসীনকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় শেখ ফরিদ আহমেদকে।

থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি কাজী মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বর্তমানে আমার ব্যক্তিগত অফিসেই দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নিজস্ব দলীয় কার্যালয় থাকলে দলীয় কার্যক্রম চালাতে তৃপ্তি পাওয়া যায়।

এস কে শাওন/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।