অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম নিজ জেলায়ই আজীবন নিষিদ্ধ!

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২১

অডিও শুনুন

প্রথম টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়া বধের নায়ক নাসুম আহমেদ। এই ম্যাচটির পর গোটা বিশ্বের মানুষ চিনেছে তাকে। তবে সবাই হয়তো জানে না নিজ জন্মস্থান সুনামগঞ্জের ক্রিকেট থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন এই নাসুম আহমেদ।

শুনে অবাক হচ্ছেন না? অবাক হওয়ারই কথা। গত একযুগ আগে নিজ জেলা সুনামগঞ্জের বদলে বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির আশায় সিলেট জেলা দলের খেলোয়াড় হয়ে ক্রিকেট খেলেছিলেন নাসুম আহমেদ। এ কারণে ২০১৫ সালে সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি তাকে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

২০২০ সালে জেলা দলের হয়ে খেলতে এলে এ নিষেধাজ্ঞার কারণে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেই আক্ষেপ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন নাসুম। মাথায় নিয়ে ঘুরছেন নিজ জেলায় শাস্তির খড়্গ।

এক যুগ আগে সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে স্থান পেয়ে খেলতেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই মুখ। বা হাতে বিধ্বংসী ব্যাট করতেন তিনি। সঙ্গে অফস্পিন বোলিংয়েও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেন। বোলারের চেয়ে তখন ব্যাটসমান পরিচয়ই মুখ্য ছিল তার।

প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাব ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিরাই উপজেলার হাওরঘেরা দুর্গম গ্রাম মধুরাপুরের সন্তান নাসুম আহমদ। সপরিবারে সিলেটে অবস্থান করলেও ক্রিকেটপাগল নাসুম ২০০৯ সালে সুনামগঞ্জ জেলা দলের হয়ে খেলার লক্ষ্যে সুনামগঞ্জে আসেন। ডাক পান জেলার অন্যতম ক্রিকেট ক্লাব প্যারামাউন্টে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ওই ক্লাবের হয়ে নিয়মিত খেলেন। পরে তিনি বয়সভিত্তিক সিলেট জেলা দলের হয়ে খেলেন। সুনামগঞ্জ ক্রিকেটের সঙ্গে ছেদ পড়ে তার। এ কারণে সুনামগঞ্জের ক্রিকেট বিভাগ তাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এই বহিষ্কারাদেশ এখনো ঝুলছে।

প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের খেলোয়াড় আশিক মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘নাসুম ভাই ছিলেন আমাদের সেরা খেলোয়াড়। তিনি ব্যাটিং-বোলিংয়ে সমান নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। আমরা ছোটরা তার খেলা মুগ্ধ হয়ে দেখেছি। জেলার তরুণরা সংস্পর্শ পেলে তার মতো আরও অনেক নাসুম সুনামগঞ্জ থেকে বের হবে।’

প্যারামাউন্ট ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনাম আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ নাসুমকে সারা বিশ্ব চেনে একজন অফস্পিনার হিসেবে। কিন্তু আমাদের ক্লাবে ২০০৯ সালে ছোট্ট নাসুম বাঁহাতি ব্যাটসমান হিসেবে সুযোগ পেয়েছিল। পরে সে অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে আমাদের মুগ্ধ করেছিল। পরে যখন ক্রিকেট লিগ শুরু হয় তখন সে আমাদের জানায়, সুনামগঞ্জ জেলা টিমে সুযোগ-সুবিধা কম। তাই সিলেট দলে খেলবে। ক্রিকেট নিয়ে তার স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সে সিলেট জেলার হয়ে খেলে। এই তুচ্ছ কারণে তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আজীবনের জন্য যখন নিষিদ্ধ করে তখন আমি ওই বৈঠকে ছিলাম। এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি তার নিষ্ঠা আজ দেখিয়ে দিল। সে পরিশ্রম করে এই অবস্থানে এসেছে। আমরা অবিলম্বে তার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে লজ্জা থেকে মুক্তির দাবি জানাই।’

সুনামগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, নাসুম সুনামগঞ্জ জেলা টিমে না খেলে অন্য জেলার টিমে খেলায় তাকে আমাদের জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট কমিটি সাসপেন্ড করেছিল। তারা এই সিদ্ধান্ত জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটিতে পাঠানোর পর তৎকালীন কমিটি তাকে বহিষ্কারের অনুমোদন দেয়। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আগামী মিটিংয়ে আমরা বৈঠক করে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেব।

লিপসন আহমেদ/এসআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।