বিক্রি হয়নি ‘শাকিব’, ‘ডিপজল’ আর ‘মানিক’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, ২৫ জুলাই ২০২১

করোনা আর লকডাউনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে কোরবানির পশু কেনাবেচায়। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারি ও গরু ব্যবসায়ীরা। এর শিকার হয়েছেন টাঙ্গাইলের দুই তরুণ খামারিও।

সঠিক দাম না পাওয়ায় কোরবানির হাটে বিক্রি হয়নি সর্বোচ্চ ক্রেতা আকৃষ্ট করা ‘শাকিব খান’, ‘ডিপজল’ আর ‘মানিকে’র মত ষাঁড়। এর ফলে ষাঁড়গুলো লালন-পালনের ব্যয় বহনসহ পুনরায় বিক্রির শঙ্কায় রয়েছেন এই খামারিরা। তবে অবিক্রীত ষাঁড়গুলো লালন-পালনে খামারিদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন প্রাণীসম্পদ বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষের দিকে তিনটি গাভী দিয়ে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের কলেজছাত্র ও তরুণ উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলাম জিসান শুরু করেন গরুর খামার। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ২৫টি ষাঁড় আর গাভী। খামার শুরুর পর গত দুই বছর সাত মাস আগে তার খামারে জন্ম নেয় ফ্রিজিয়াম জাতের দুটি ষাঁড়। যার একটির নাম রাখা হয় শাকিব খান আর অন্যটির নাম ডিপজল।

jagonews24

শান্ত প্রকৃতি ও সাদা রঙের ষাঁড়টি শাকিব খান। আর কালো রঙয়ের ষাঁড়টির নাম ডিপজল। ষাঁড় দুটি লম্বায় সাত ফিট।

শাকিবের বর্তমান ওজন প্রায় ৩০ মণ আর ডিপজলের ৩১ মণ। এবারের কোরবানির ঈদে শাকিবের দাম ১৩ আর ডিপজলের দাম ১২ লাখ টাকা চান খামারিরা।

অপরদিকে জেলার দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. হামিদ আলীর মেয়ে হামিদা আক্তার লালন-পালন করেন দুটি গরু। যাদের নাম মানিক-রতন।

চার বছর বয়সী ষাঁড় দুটির মধ্যে ১৫১০ কেজি বা ৩৮ মণ ওজনের মানিকের দাম হাঁকানো হয় ১৪ লাখ টাকা আর ১৪৮০ কেজি ৩৫ মণ ওজনের রতনের দাম হাঁকানো হয় ১৩ লাখ টাকা। গাবতলি হাটে ষাঁড় দুটির মধ্যে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় রতনকে।

শাকিব খান আর ডিপজলের মালিক জোবায়ের ইসলাম জিসান জানান, ষাঁড় দুটি বিক্রির জন্য কোনো হাটে নেননি তিনি। তবে ঈদের আগে ষাঁড় দুটি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা এসেছেন তার বাড়িতে। এদের কয়েকজন শাকিব খানের দাম বলেছিলেন ৮ লাখ আর ডিপজলের দাম বলেছেন ৭ লাখ টাকা। তবে এ সময় আরও বেশি দামের আশায় ষাঁড় দুটি বিক্রি করেননি। এরপর আর কোনো ক্রেতা আসেনি।

জিসান আরও জানান, এ বছর মহামারির কারণে বড় গরুর ক্রেতা ছিল কম। এছাড়াও খামারে থাকা বেশির ভাগ গরুই বিক্রি করা যায়নি। এ কারণে এ বছর গরু ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আগামী ঈদে ষাঁড় দুটি বিক্রির কথা ভাবছেন এই খামারি।

jagonews24

অপর খামারি হামিদা আক্তার বলেন, ঈদে বেশি দামে বিক্রির আসায় আমি আমার অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় মানিক ও রতনকে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতি লালন-পালন করেছি। দাম কম পাব বলে গত বছরের ঈদেও আমি ষাঁড় দুটি বিক্রি করিনি। এ বছর গরু দুটি নিয়ে রাজধানীর গাবতলি হাটে যাই। তবে এ হাটে বড় গরুর ক্রেতা ছিল কম। তিনদিন হাটে অপেক্ষা করে সবচেয়ে বেশি দাম ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় আমি আমার ষাঁড় রতনকে বিক্রি করতে পারি। তবে এই দামে ষাঁড়টি বিক্রি করার ইচ্ছা আমার ছিল না। শুধু ব্যবসা টিকিয়ে রাখাসহ পরিবারের খরচ যোগান দিতে ওই দামে ষাঁড়টি বিক্রি করা হয়েছে। ক্ষতি হলেও কিছুই করার ছিল না। আগামী ঈদে আমার অবিক্রীত ষাঁড় মানিককে আরও ভালো দামে বিক্রি করব।

দেলদুয়ার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এনায়েত করিমের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও বাসাইল উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. রৌশনী আকতার বলেন, জিসানের খামারে ষাঁড় দুটির বয়স কম ও ষাঁড় দুটি লালন-পালন হয়েছে দেশীয় খাবারে। এ কারণে ওই ষাঁড়টি পালনে তেমন একটা সমস্যার সম্মুখীন হবেন না ওই খামারি। এরপরও জিসানের ষাঁড় দুটি পালনে পরামর্শ দেয়াসহ নিয়মিত ভ্যাকসিন ও ওষুধ সেবার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

আরিফ উর রহমান টগর/জেডএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।