হাতি তাড়াতে এবার সোলার প্যানেল শক


প্রকাশিত: ১১:৩৩ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জনপদে হাতি-মানুষে লড়াই এখন নতুন কোন খবর নয়। দীর্ঘদিন থেকেই সীমান্তবাসী তাদের আবাদি ফসল, গোলার ধান সহায়-সম্বল বাঁচাতে জীবন বাজি রেখে বন্যহাতির সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে। স্থানীয় লোকজন সনাতন পদ্ধতিতে হাতি তাড়াতে চেষ্টা করলেও কোনো ফলোদয় হচ্ছে না। এ জন্য বন্যহাতির আক্রমণ থেকে জনগনের জান-মাল রক্ষায় সরকার পাহাড়ে বেত চাষ, মৌ-চাষ, বিদ্যুতায়নসহ বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তারপরও বন্যহাতির আক্রমণ ঠেকানো যায়নি। বরং প্রতিবছরই জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। আর এবার হাতি তাড়াতে সীমান্ত জনপদে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায়  ‘বৈদ্যুতিক শক’ দেওয়ার এক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। বনবিভাগ পরীক্ষামুলকভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার গারোপাহাড়ে বিশেষ করে হাতির আক্রমণ যেসব এলাকায় বেশী হয়, সেসব এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ‘সোলার প্যানেল শক প্রকল্প’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার প্রায় ১৮ কিলোমিটার হাতির বিচরণক্ষেত্র এবং হাতির আক্রমনের সম্ভাব্য গতিপথে ‘সোলার প্যানেল শক’ প্রকল্প নেওয়া হবে।

তবে প্রাথমিকভাবে ৬ কিলোমিটার এলাকায় এ প্রকল্প চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাই ও জরিপ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে দু’টি এনজিও’কে এ জড়িপ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের জরিপও প্রায় শেষের দিকে। খুব শ্রীঘ্রই এ প্রকল্পের প্রাথমিক ও পীরক্ষামূলক ৬ কিলোমিটারের কাজ শুরু হবে। তবে সীমান্তের কোন এলাকা থেকে শুরু হবে তা এখনও চিহিৃত করা হয়নি বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান।

বনবিভাগের ‘স্ট্রেংদেনিং রিজওয়ানাল কো-অপারেশন ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশান প্রজেক্ট’ (এসআরসিডব্লিউপি) প্রকল্পের কনজারভেটর অব ফরেষ্ট (সিএফ) ও বন্যপ্রাণী বিষেজ্ঞ ড. তপন কুমার দে জানান, ভারতের শিলিগুড়িতে হাতি তাড়াতে বৈদ্যুতিক শকের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে এ প্রকল্প বেশ সফল হয়েছে। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে তৈরি এ বৈদ্যুতিক শক খেয়ে হাতি চলে যাবে, কিন্তু তাতে মানুষের কোন ক্ষতি হবে না। এর ফলে হাতি-মানুষের সহাবস্থানও নিশ্চিত হবে।

ভারতে তিনি প্রকল্পটি সরজমিনে দেখে এসেছেন বলেও উল্লেখ করে বলেন, সেই আলোকে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামুলকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রায় এক বছর পূর্বে শেরপুরে ‘ওয়াইল্ডলাইফ এন্ড নেচার কনজারভেশন সার্কেল’ এর শেরপুর জেলা সদরে বন কর্মকর্তার কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় একটি নতুন অফিসও স্থাপন করা হয়েছে।
 
তবে সীমান্তের অধিবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুই না জানলেও তারা আবারও আশায় বুক বাধছেন, যদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে সত্যি সত্যিই হাতির হাত থেকে বাঁচা যায় তাও ভালো।

এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতীর গজনি বীট অফিসার দ্বীন মোহাম্মদ জানান, হাতি-মানুষের সহাবস্থান এবং বন্যহাতি’র আক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে যে প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে তার জরিপ কাজ ইতোমধ্যে শেষ পর্যায়ে। ‘হিড্স’ এবং ‘আইইউসিএন’ নামে দুটি সংস্থা সম্প্রতি জরিপ কাজ এবং কর্মশালা করেছে। তবে তাদের চুড়ান্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।

এর আগে শেরপুর সীমান্তে বন্যহাতি তাড়াতে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর পরামর্শে বনবিভাগ পাহাড়ে ‘বেত গাছ প্রকল্প’, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ‘পাহাড়ে বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম’ বাস্তবায়ন করে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সাবেক হুইপ প্রয়াত জাহেদ আলী চৌধুরী হাতি তাড়াতে ‘মৌমাছি প্রকল্প’ চালু করে। ওয়ার্ল্ডভিশনের হাতি বিশেষজ্ঞরা পাটের আঁশে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে প্রতিরোধের পরামর্শ দেয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।