অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে পরিবেশ আদালতে মামলা
মাদারীপুরে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দীর্ঘদন ধরে উন্নত প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত না করে এবং পরিবেশ বিধিমালা লঙ্ঘন করে সনাতন পদ্ধতিতে মেসার্স শিকদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কোং নামে ইটভাটা স্থাপন করে পরিচালনা করছেন। সরকারি বিধান অমান্য করে ঘনবসতি পূর্ণ আবাসিক এলাকার কৃষি জমিতে গড়ে তুলেছেন এই ইট ভাটা।
জ্বালানি হিসেবে বৃক্ষ ধংস কাঠ পোড়ানো হচ্ছে দেদারছে। ফলে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি এলাকার জনস্বাস্থ্য পড়েছে হুমকির মুখে।
অভিযোগে জানা গেছে, মাদারীপুর মহিষেরচর এলাকার মেসার্স শিকদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কোং নামের ভাটাটি সনাতন পদ্ধতিতে নির্মিত ও পরিচালিত। (যা ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ অনুসারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ভাটা) এ ভাটার পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, প্রত্যয়নপত্র, বিএসটিআই এর সনদপত্র, আয়কর সনদপত্র, ফায়ার সার্ভিসের ফিটনেস সনদপত্র কিছুই নেই। এমন কি সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্সও নেয়া হয়নি। অথচ, প্রশাসনের নাকের ডগায় আইন অমান্য করে হাজার হাজার টন কাঠ পুড়িয়ে ফলজ বৃক্ষ ধ্বংস ও পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে।
অবৈধভাবে ইটভাটা পরিচালনার অপরাধে চলতি বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদফতর মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভাটার মালিক পক্ষকে। তারপরও আবাসিক এলাকায় কাঠ পুড়িয়ে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য ভাটার ৩.৩৩ একর জমির প্রকৃত মালিক ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা গ্রামের মো. শহিদুজ্জামান চৌধুরী পরিবেশ আদালত (ঢাকায়) একটি মামলা দায়ের করেন এবং একই সঙ্গে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। পরিবেশ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে এ বছর ১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ছায়েফউল্যা তালুকদার গত ২০ অক্টোবর পরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ভাটাটি ১২০ ফুট চিমনি বিশিষ্ট সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি, যা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
পরিচালক, ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়, পরিবেশ অধিদফতর গত ৩০ নভেম্বর ফরিদপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ছায়েফ উল্যা তালুকদার এর প্রতিবেদনের সাথে একমত প্রকাশ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ভাটার জমির প্রকৃত মালিক ও মামলার বাদী মো. শহিদুজ্জামান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ইট ভাটাটি আমার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হাল রেকর্ডিয় স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তি। মাদারীপুর জেলার গোবিন্দপুর মৌজার জেএল নং-১০১, বিআরএস খতিয়ান নং-১৯৪, ৪৮৬, ৪৮৭, ৪৮০ দাগ নং-৩২,৫,৩১,৪৬/২৪১,৩০, ৪৮৮ জমির পরিমাণ ৩.৩৩ একর। উক্ত জমির উপর অবৈধ ও বে-আইনিভাবে ইমান সিপাহী, মোস্তফা মাতুব্বর, মো. কামাল মুন্সী, আয়শা গৌড়া, আবু আলম ফকির গং মেসার্স শিকদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কোং (১২০ ফুট চিমনির ইট ভাটা) নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও প্রতিবেশিদের ক্ষতিসাধন করে আসছেন। আমি পরিবেশ আদালত ঢাকায় মামলা করেছি। একই সঙ্গে ইট ভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসক মাদারীপুরের বরাবরে আবেদন করেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
শাহিদুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, আমি পরিবেশ আদালতে মামলা করলাম ১১ নভেম্বর। বিজ্ঞ আদালত ১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়কে নির্দেশ প্রদান করেন। অথচ ফরিদপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ছায়েফউল্যা তালুকদার ২০ অক্টোবর পরিচালক, পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা অঞ্চল কার্যালয়ে একটি প্রতিবেন পাঠান। প্রতিবেদনে তিনি ভাটাটি বন্ধ আছে উল্লেখ করলেও ভাটার কার্যক্রম এক দিনের জন্যও বন্ধ ছিল না। তিনি আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
ফরিদপুর পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ছায়েফউল্যা তালুকদার বলেন, ভাটার মালিকগণ ভাটাটি অবৈধভাবে পরিচালনা করছে। আমি দুবার ভাটাটি পরদর্শন করেছি। ভাটা বন্ধ না করলে যেকোনো সময় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ভাটা জরিমানা ও ইট ভেঙে ফেলা হবে।
এ কে এম নাসিরুল হক/এমজেড/আরআইপি