ট্রাফিক পুলিশকে ভর্ৎসনা করে লাইভ, সেই ভুয়া সাংবাদিক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ১৪ জুলাই ২০২১
আটক ভুয়া সাংবাদিক ফয়সল কাদির ও মামলার বাদী ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট নুরুল আফসার।

সিলেটে মোটরসাইকেল আটকানোয় ক্ষিপ্ত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুকে লাইভ করে ভাইরাল হওয়া সেই কথিত সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৯।

মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিলেট মহানগরের পীরের বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আটক ভুয়া সাংবাদিক ফয়সল কাদির (৩৯) ফেসবুকভিত্তিক পিকে টিভির (পৃথিবীর কথা টিভি) ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও মাতৃজগত নামে একটি পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৯ এর মিডিয়া কর্মকর্তা ওবাইন।

গত ৯ জুলাই সিলেট মহানগরের সুরমা গেট এলাকায় সড়ক পরিবহন আইন অমান্য করে তিনজনকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালানোয় কথিত সাংবাদিক ফয়সল কাদিরের মোটরসাইকেল আটকান সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া। এ সময় ওই গাড়ির কোনো কাগজপত্র ও নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি ফয়সল। এরপর ট্রাফিক সার্জেন্ট মোটরসাইকেলটির বিরুদ্ধে মামলা দিলে পুলিশকে হুমকি-ধমকিসহ নানা অপপ্রচার চালিয়ে ‘পিকে টিভি’ নামে ফেসবুক পেজে লাইভ করে ফয়সল কাদির। যা কয়েকঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়ে ওই সাংবাদিক।

এ ঘটনায় রোববার (১১ জুলাই) রাতে ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. নুরুল আফসার ভূইয়া বাদী হয়ে ফয়সল কাদিরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে ফয়সল কাদিরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য সরাসরি প্রচার করে সমাজে অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়।

এদিকে ফেসবুক লাইভের কমেন্টেই অনেকে ফয়সল কাদিরের আচরণের নিন্দা করেছেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে অবৈধ সুবিধা আদায়ের চেষ্টা, ক্ষমতা প্রদর্শনের নিন্দা করেন মন্তব্যকারীরা। একই সঙ্গে প্রশংসিত হয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের আচরণ।

১১ জুলাই রাতে ফেসবুকে পিকে টিভির পেজ থেকে দেয়া আরেকটি লাইভে ফয়সল কাদির বলেন, ‘ওই দিন আমি অসুস্থ ছিলাম। একটি পারিবারিক ঝামেলার কারণে আমার মনমানসিকতাও ভালো ছিল না। তাই কিছু উল্টাপাল্টা ব্যবহার করে ফেলেছি। পুলিশ সদস্যদের মনে কষ্ট দিয়েছি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’

মোটরসাইকেল আটকানোর পর ফেসবুকের ওই লাইভে ফয়সল কাদিরকে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদের নাম একাধিকবার নিতে শোনা যায়। লাইভে তিনি দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমার মোটরসাইকেলে হাত দেবেন না। আমি ডিসি সাহেবকে ফোন দিচ্ছি। তিনি এখানে আসবেন। তারপর দেখব।’

এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘এই লোককে (ফয়সল কাদির) আমি চিনি না। অনেকেই তো আমাকে কল দেয়। সব কল রিসিভ করাও হয় না। ওই দিন তার সঙ্গে আমার কোনো আলাপ হয়নি। এর আগে কোনোদিন হয়েছে বলেও মনে করতে পারছি না।’

ফয়সল কাদির নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তার বিষয়ে সিলেটের মূলধারার সাংবাদিকেরা কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, ‘মাতৃজগত নামে কোনো পত্রিকার নাম কখনো আমি শুনিনি। এই নামে কোনো পত্রিকা আছে কি-না, আমার জানা নেই। ফয়সল কাদির নামে কোনো সাংবাদিককেও চিনি না। তিনি সিলেটের কোনো সাংবাদিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যে কেউ একটি ফেসবুক পেজ খুলে নিজেকে সাংবাদিক, এমনকি সম্পাদক পরিচয় দিয়ে দিচ্ছেন। এতে প্রকৃত সাংবাদিকেরাও বিপাকে পড়ছেন। দায়িত্ব পালনে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা চাই এসব বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হোক। যাতে কেউ সাংবাদিক পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।’

ছামির মাহমুদ/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।