রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি : কিশোরগঞ্জে ৮ শ্রমিকের বাড়িতে শোকের মাতম
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জের আটজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। এদের অনেকেই অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মারা গেছেন বলে ধারণা পরিবারের। এ নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। তাদের সন্ধানে মরিয়া স্বজনরা।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের কালিয়ারকান্দা গ্রামের চানমিয়ার ছেলে নাজমুল (১৪)। বাবা দিন মজুর। মা নাজমা বেগম মাটি কেটে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। কিন্তু অভাব অনটনের সংসারে বাধ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপপুরে মাত্র চার হাজার টাকা বেতনে শ্রমিকের চাকরি নেয় নাজমুল।
দুদিন আগে সবশেষ মায়ের কাছে ফোন করে। সে মাকে বলেছিল সামনের ঈদে বেতন হবে। বেতনের টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবে সে। এরইমধ্যে শুনলেন ছেলের নিখোঁজের খবর।
শুক্রবার (৯ জুলাই) রাতে কালিয়ারকান্দা গ্রামে নাজমুলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট্ট কুঁড়েঘরে মা নাজমাসহ স্বজনরা নাজমুলের ছবি আর সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। স্বজনদের আহাজারিতে যেনে কারও চোখের পানি ধরে রাখা যাচ্ছিল না।
বাঁ থেকে নিখোঁজ শ্রমিক অম্রিতা, নাজমুল ও রাবেয়
নাজমুলের মা জানান, দুই ভাই-বোনের মধ্যে নাজমুল ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। শুক্রবার ফোনে তার নিখোঁজের খবর পান স্বজনরা।
কটিয়াদী উপজেলার গৃহবধূ জুবেদা বেগমের দুই মেয়ে কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। রূপগঞ্জের আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ছোট মেয়ে রাবেয়া (১৮)। বড় মেয়ে কল্পনাকে বিয়ে দিলেও স্বামী তাকে ফেলে চলে গেছে। কল্পনার আট বছরের মেয়েটি জুবেদার কাছে থাকেন।
টানাপোড়নের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে মাত্র কয়েক মাস আগে রূপগঞ্জের বেভারেজ কোম্পানিতে শ্রমিকের কাজ নেন রাবেয়া (১৮)। কিন্তু এমন দুঃসংবাদে সব স্বপ্নই যেন শেষ হয়ে গেছে জুবেদার। মেয়ের মৃত্যুর খবরে শোকে পাথর হয়ে গেছেন তিনি।
তাদের মতো কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় রূপগঞ্জের ব্যাভারেজ কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের নিখোঁজের সংবাদে দিশেহারা স্বজনরা।
খোঁজ জানা গেছে, বেভারেজ কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলায় দুজন, কটিয়াদী উপজেলায় তিনজন এবং করিমগঞ্জ উপজেলায় তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী জেলার নিখোঁজরা হলেন- কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের কালিয়ারকান্দা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে নাজমুল (১৪), একই ইউনিয়নের গাগলাইল গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার স্ত্রী আছমা (৪৫), করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কুকিমাদল গ্রামের হারুনর রশীদের মেয়ে মিনা আক্তার (২২), একই ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আবু বাক্কার (৪২) ও তার স্ত্রী জেসমিন (৩৫), কটিয়াদী উপজেলার ধুলদিয়া ইউনিয়নের গৌরীপুর গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী অমৃতা আক্তার (২৫), একই এলাকার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবিয়া (১৮) ও বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাসলিমা (১৮)।
এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারি সূত্রে এখনো হতাহতের বিষয়টি সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. শামীম আলম বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমরা জেলার কেউ কেউ মারা গেছেন বলে খবর পাচ্ছি। কিন্তু সরকারিভাবে এখনো নারায়ণগঞ্জ থেকে আমাকে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে আমরা নিজেরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
নূর মোহাম্মদ/এসজে/এমএস