কোয়েল পালন করে শামীমের স্বপ্ন পূরণ


প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫

ছোট বেলায় বই পড়েছি। তখনই কোয়েল পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। স্বপ্ন দেখেছি কোয়েল পোষার। কিন্তু টাকার অভাবে তা পূরণ হয়নি। স্বপ্নের কথা জানালেও রাজি হননি অভিভাবকরা। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের ইচ্ছায় অর্থ উপার্জনে পাড়ি জমাতে হয় প্রবাসে। টাকা জমিয়ে ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরি। আবারও উৎসাহ জাগে কোয়েল পোষার। ২০১২ সালে বাড়ির পাশে ২০ শতাংশ জমির ওপর ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে গড়ে তুলি শখের সেই কোয়েল পাখির খামার। বর্তমানে আমার খামারে কোয়েল পাখির সংখ্যা ১২ হাজার। এর মধ্যে লেয়ার পাখি সাত হাজার। প্রতিমাসে পাঁচ হাজার কোয়েল নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। ওই সব ডিম ও ব্রয়লার ঢাকা ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে মাসে চার-পাঁচ লাখ টাকা বিক্রি করছি। এখন আমার মাসিক আয় লাখ টাকার ওপরে।

এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আত্মপ্রত্যয়ী সফল যুবক হলেন সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের শামীম আল মামুন। ওই যুবক এলাকায় এখন ‘কোয়েল শামীম’ নামেই পরিচিত।

শামীম আল মামুন জানান, উপজেলার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি বগুড়ায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। ছুটে যাই সেখানে। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০০ বাচ্চা কিনে যাত্রা শুরু করি কোয়েল পাখি পোষার। বই পড়ে, প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহযোগিতা ও বাচ্চা বিক্রেতাদের কাছে নিয়ম জেনে প্রথমে নিজেই কোয়েলের যত্ন নিতে থাকি। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা। ব্যস্ততার মাঝে খুঁজে পাই এক প্রকার বিনোদন। সেখান থেকে প্রতি মাসে আয়ের অংশ খুঁজে পাওয়ায় উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। বাড়াতে থাকি কোয়েলের সংখ্যা। বাড়তে থাকে কাজের ব্যাপক সফলতা। খামারে এখন পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছে।

শামীম আরও জানান, ‘ইনকিউবেটরে’ প্রতি সপ্তাহে ৮-১০ হাজার বাচ্চা ফুটানো হচ্ছে। ওই সব বাচ্চা প্রতিদিন সখীপুর ছাড়াও ঢাকা, বগুড়া, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি খামারে সরবরাহ করছি। কোয়েল পরিবেশবান্ধব। তাই প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য আসা লোকজন জানতে চান কোয়েল চাষের কলা কৌশল। লেয়ার জাতের কোয়েল ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেয়া শুরু করে ও টানা ১৮ মাস ডিম দিয়ে থাকে। অপর দিকে ব্রয়লার জাতের কোয়েল ২৮ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। একটি কোয়েল প্রতি বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।

সখীপুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী ফজলুল হক বলেন, আমি বাজারে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করি। মুরগীর চেয়ে কোয়েলের ডিমে বেশি লাভ হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ বলেন, কোয়েল পালন অল্প পুঁজিতে একটি লাভজনক ব্যবসা। মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। রোগীর পথ্য হিসেবেও খুব উপযোগী। ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া কোয়েল পালনে কোনো ঝুঁকি নেই। মুরগীর ভ্যাকসিন দিয়েই কোয়েল পাখির চিকিৎসা করা যায়।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।