কোরবানিতে তিন কোটি টাকার গরু বিক্রির আশা এরশাদের
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের জে.সি এগ্রো ফার্ম। সবুজ ফসলের মাঠের পাশ ঘেঁষে স্থাপিত এ বিশাল খামারে চোখে পড়বে নানান জাতের গবাদি পশু। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে সেখানে মোটাতাজা করা হচ্ছে বিশালাকারের ষাঁড়, মহিষ এবং গয়াল। উদ্দেশ্য আসন্ন কোরবানির হাটে বিক্রি।
এরশাদ উদ্দিন নামে এই গ্রামেরই এক তরুণ খামারটির উদ্যোক্তা। তার খামারের পশুর নাম-ডাক ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দূরান্তে। শুধু বেচা-কেনার জন্যই নয়, খামারটি দেখতেও ভিড় করছেন অনেকে।
আসন্ন কোরবানিতে তিন কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা করছেন এরশাদ। জানালেন, নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার শিক্ষিত তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে চলমান করোনা মহামারিতে গ্রামের বাড়িতে থেকে এ খামার গড়ে তুলেছেন তিনি।
গত বছর মহামারির শুরুর দিকে মাত্র ২০টি গরু নিয়ে জে.সি এগ্রো ফার্মের যাত্রা শুরু। মাত্র এক বছরেই লাভের মুখ দেখার পাশাপাশি খামারটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ভুট্টার ফল ও গাছ, সবুজ ঘাস, দেশি খাবারের পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যায় খামারের পশুগুলো বেড়ে উঠছে দ্রুত। দূর-দূরান্তের লোকজন খামারে আসছে দশাসই আর সবল পশুগুলোকে দেখতে।
খামারটি স্থানীয়দের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি কম খরচে পশু মোটাতাজাকরণে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন অনেকে। এরশাদের দেখাদেখি অনেকেই খামার গড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
রাজধানীর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও খামারটির কর্ণধার এরশাদ বলেন, ‘শুধু লাভের আশায় নয়, গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা কমানোর লক্ষ্য নিয়েই প্রত্যন্ত গ্রামে খামারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকি। তবে মন পড়ে থাকে গ্রামে। গ্রামের বাড়িতে একটি খামার করার স্বপ্ন ছিল অনেকদিন ধরেই। গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসি। এখানে ২০টি গরু দিয়ে খামার শুরু করি। প্রাকৃতিক খাবার ও মনোরম পরিবেশে খামারের পশুগুলো দ্রুত বেড়ে উঠছে দেখে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। খামারে প্রায় আড়াইশ পশু এক সঙ্গে লালন-পালন করা হচ্ছে।’
খামারের কর্মীরা জানান, পশুগুলোর খাবারে কোনো ধরনের রাসায়নিক না মিশিয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হয়। এজন্য হাওরের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করা হয়। গাজন পদ্ধতিতে সবুজ ভুট্টা গাছ থেকে পশুর পুষ্টিকর খাবার তৈরি করা হয়। এছাড়া সবুজ ঘাস ও খৈল দেয়া হয়। এ খামারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এলাকার ২০ যুবকের।
খামারে ২৫০টি পশুর মধ্যে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে, ১৫০টি ষাঁড় ও ৪০টি মহিষ ও ৮টি গয়াল। আগামী বছর থেকে খামারে এক হাজার পশু মোটাতাজা করা হবে বলে আশাবাদী কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা গরু কিনতে আসছেন। গত এক সপ্তাহে খামার থেকে ৬০টি ষাঁড় বিক্রি হয়েছে।
নূর মোহাম্মদ/এসএস/জিকেএস