মাসিক ৩০ হাজার টাকায় মাদরাসার মাঠ ভাড়া!
শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ জুন পর্যন্ত। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত আসতে পারে, না হয় আবারও সময় বাড়তে পারে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
কিন্তু তাতে গুরুত্ব দেননি দিনাজপুর সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের কর্ণাই দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম। মাসিক ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে মাদরাসার মাঠ ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসা মাঠে পাঁচটি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে মনে হবে না এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঘুরে কোথাও দেখা যায়নি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো সাইনবোর্ড। রাস্তা থেকে মাদরাসার মাঠ পর্যন্ত কাদাপানিতে ভরা। দূর থেকে মনে হবে এটি কোনো পাথরের খনি।
শিক্ষার্থীদের চারণভূমি ওই মাদরাসার মাঠজুড়ে বিশাল পাথরের স্তূপ। যেন গড়ে তোলা হয়েছে পাথরের পাহাড়। প্রতিনিয়ত যাওয়া-আসা করছে পাথরবাহী বিশাল ট্রাক ও ট্রাক্টর। এসবের চিত্র ধারণ করতে দেখে চালকরা তড়িঘড়ি করে গাড়ি নিয়ে চলে যান।
মাদরাসা বন্ধ থাকায় শিক্ষক-কর্মচারী কাউকে পাওয়া যায়নি। এলাকাবাসী জানান, শুনেছেন মাঠ ঠিকাদারকে ভাড়া দেয়া হয়েছে। মাদরাসা থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঢেপা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাঠ ভাড়া নিয়েছেন। মাঠে ব্লক তৈরি করবেন। দিন-রাত এখানে আসা-যাওয়া করছে পাথরবাহী বড় বড় ট্রাক ও ট্রাক্টর। এতে রাস্তারও বেহাল দশা।
মাদরাসা খুললে পাথর সরিয়ে নিলেও মাঠে দেবে যাওয়া ও বিচ্ছিন্নভাবে পড়ে থাকা পাথর দিয়ে শিক্ষার্থীরা আহত হতে পারে। শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতের মতো কাজ করা হয়েছে। তারা দ্রুত পাথর সরিয়ে নেয়ার দাবি জানান।
কর্ণাই দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সালাম বলেন, ‘মাদরাসা বন্ধ থাকায় আমরা শিক্ষকরা মাঝে মধ্যে যাওয়া-আসা করি। পার্শ্ববর্তী ঢেপা নদীর ডুমুরতলী নামক স্থানে তীর সংরক্ষণের জন্য ব্লক নির্মাণের কাজ করছে পারিসা ট্রেড লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার পাথর রাখার জায়গা পাচ্ছিল না। মাদরাসা বন্ধ-ক্লাসও হচ্ছে না, তাই ব্লক নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাথর রাখার জন্য মাদরাসার মাঠটি ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজ শেষ হয়ে গেলে তারা চলে যাবে। যদি এর আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয় তাহলে ঠিকাদার মালামাল সরিয়ে নিবে। এমন ভাবেই ঠিকাদারের সঙ্গে মৌখিক কথা হয়েছে।’
কিন্তু মাদ্রাসা কমিটির সদস্য ইউপি সদস্য নাজির হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে মাদরাসা কমিটির সঙ্গে সুপার কোনো আলোচনা করেননি। আমি কিছুই জানি না।’
এ ব্যাপরে জানতে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি মিটিং এ আছেন বলে ফোন রেখে দেন।
এমদাদুল হক মিলন/এসজে/এমএস