বিদ্যালয় বন্ধ : দিনে আড্ডা, রাতে গাঁজা-জুয়ার আসর
বিদ্যালয়ে দিনভর চলছে মানুষের আড্ডা। ভেঙে যাচ্ছে সেখানকার বেঞ্চ, ডেস্ক, দরজা ও জানালা। শিক্ষকরাও রাখছেন না বিদ্যালয়ের খবর। এমন পরিস্থিতির দেখা যায় শহরতলীর রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এছাড়া রাতে একই জায়গায় বসে চলে গাঁজা আর জুয়ার আসর। মাদকসেবীদের জন্য এ যেন এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এছাড়াও জেলার অন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়েও দেখা যায় একই চিত্র। বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় দিনভর চড়ানো হয় গরু। কোথাও আবার স্তুপ করে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শহরতলীর রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা-জানালাগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ক্লাসের ভেতরের বেঞ্চ-ডেস্কগুলোও ভেঙে যাচ্ছে। বাইরে দিনভর মানুষ আড্ডায় দিচ্ছে। আর রাতে এখানেই গাঁজা ও জুয়ার আসর বসে।
এছাড়া দেখা যায় বানিয়াচং উপজেলার আলমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দরজা ভেঙে ক্লাসের বেঞ্চ-ডেস্ক বের করে এনেছেন স্থানীয়রা। দিনভর এগুলোতে বসে আড্ডায় মশগুল থাকেন তারা।
একই উপজেলার দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেখা যায়, সেখানে গরু চড়ানো হয়েছে। বারান্দায় বস্তায় গো-খাদ্যসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল রাখা হয়েছে। বাঘজোড় প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে স্বত্ত্ব দাবি করে সিকন্দরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এক ব্যক্তি। ফলে বিদ্যালয়ের মালামাল স্থানান্তরিত করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে। ঐতিহ্যবাহী সন্দলপুর বি সি উচ্চ বিদ্যালয়ে চলছে নির্মাণকাজ। সেখানে বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে নির্মাণসামগ্রী। বিদ্যালয়ের কয়েকটি কক্ষে বসবাস করছেন শ্রমিকরা।
এদিকে এ ব্যাপারে জানতে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সামছুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, করোনার বন্ধের পর এলাকায় প্রধান শিক্ষিকার খুব একটা দেখা মেলেনি।
বানিয়াচং উপজেলার সন্দলপুর বি সি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আকবর চৌধুরী বলেন, ‘বিদ্যালয়ে নির্মাণকাজ চলছে। তাই অনেক জিনিসপত্রই ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় রয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকরাও বিদ্যালয়ের ভেতরে বসবাস করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়মুখী হতে চাই। শিক্ষার্থীদেরও বিদ্যালয়মুখী করতে হবে। বিদ্যালয় খোলার আগেই উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হবে। সেজন্য এরইমধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ও মাস্ক ক্রয় করে রাখা হয়েছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন কুমার দাশ বলেন, ‘করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর অনেক প্রভাব পড়বে। অনেক শিক্ষার্থীর ভালো মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেটের ব্যবস্থা নেই। তারা অনলাইন ক্লাসে যোগদান করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্তিতি একটু স্বাভাবিক হলেই বিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া দরকার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবে ১৩ জুনের আগেই সব পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য এক লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।’
দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমির রায় জানান, তার বিদ্যালয়ে গরু চড়ানোর বিষয়টি তিনি জানেন না। বিদ্যালয়ে যে বস্তা রাখা হয়েছে তাও তিনি জানেন না। তিনি বিদ্যালয়ে গিয়ে এগুলো সরানোর ব্যবস্থা করবেন।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানের পরিবেশ তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খোলার আগে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য সরকার থেকে এরইমধ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রাহিন উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে বেঞ্চ, ডেস্ক, দরজা, জানালা ভাঙা থাকার ও মানুষের আড্ডা দেয়ার বিষয়টিও জানি না। খবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এখলাছুর রহমান খোকন/এসএমএম/এএসএম