হাতকড়াসহ ৫ দিন ধরে পলাতক যুবক, গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য গ্রাম
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দুই পুলিশ সদস্যকে ঘুষি মারা মো. বরকত নামের সেই যুবক হাতকড়াসহ পাঁচ দিন ধরে পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নামে পুলিশের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার ভয়ে একটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। থানা পুলিশের নিয়মিত অভিযানে এলাকাজুড়ে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আলফাডাঙ্গা উপজেলার ৬ নম্বর পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের ধুলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দারা গ্রেফতার এড়াতে বসতভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। বর্তমানে গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতে নারী ও শিশুরাই শুধু অবস্থান করছেন। বাজারেও অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে আরও শতাধিক অজ্ঞাত আসামি করার কারণেই গ্রামে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তারা।
ধুলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা শিলা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী পুলিশ আহতের খবর জানেও না। কিন্তু তাকে পুলিশ এই মামলার আসামি করেছে।’
খোরশেদ শেখ বলেন, ‘শনিবার রাতে শহীদ শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে আগুন লাগে। কিন্তু গ্রামে পুরুষ মানুষ না থাকায় আগুন নেভাতে অনেক কষ্ট হয়েছে।’
সোনিয়া বেগম নামে আরেক নারী বলেন, ‘সব সময় ভয়ে আছি। পুলিশের ভয়ে বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য নেই। সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএম জালাল উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘ওইদিন দায়িত্বরত ওসি ও এসআই মিজানুর রহমান কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া আমার বাড়িতে সিভিল পোশাকে ভাতিজাসহ আমাকে গ্রেফতার করে। সমাজে আমাকে অপদস্থ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাঁচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার বেড়িরহাট বাজারে দু’পক্ষের এরকম কোনো সংঘর্ষের ঘটনা আমার জানা নেই। আমি কয়েকদিন ধরে এলাকায় ছিলাম না। ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আছি। হাতকড়া নিয়ে পালানো যুবক আমার সমর্থকও নয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো প্রকার সম্পৃক্ততাও নেই। কিন্তু আমি ঢাকা থেকেও এই মামলার মিথ্যা আসামি হয়েছি। যা খুবই দুঃখজনক।’
তিনি এ ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশের করা মামলা থেকে জানা যায়, গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ৬ নম্বর পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমান ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের সম্ভাব্য ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী খালিদ মোশাররফ রঞ্জুর মধ্যে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনা ঘটে আসছে।
সম্প্রতি এ নিয়ে দু’পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে। পরে মামলায় উভয়পক্ষ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় আসে। এলাকায় এসে ৪ জুন সন্ধ্যায় ইউনিয়নের ধুলজুড়ি গ্রামের বেড়িরহাট বাজারে দু’পক্ষ পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে থানা পুলিশ সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় উভয়পক্ষের ইটপাটকেলের আঘাতে এসআই মঞ্জুর হোসেন ও এএসআই মো. জামাল উদ্দিন আহত হন।
তবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন ৪ জুন সন্ধ্যায় আলফাডাঙ্গা থানার এসআই মঞ্জুর হোসেন ও এএসআই জামাল উদ্দিন বেড়িরহাট বাজারে গিয়ে ধুলজুড়ি গ্রামের বরকত নামে এক যুবকের এক হাতে হাতকড়া দেন। তখন বরকত আরেক হাত দিয়ে এসআই মঞ্জুরকে ঘুষি দেন। ওই সময় এএসআই জামাল উদ্দিন ওই যুবককে ধরতে এগিয়ে গেলে তাকেও তখন হাতকড়া পরা হাত দিয়ে আঘাত করে ওই যুবক পালিয়ে যান। এছাড়া গ্রামে ওইদিন দু’পক্ষের কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
এসব বিষয়ে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াহিদুজ্জান বলেন, ‘ওরা আমার দুই পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছে বিধায় মামলা হয়েছে। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন গোলমাল লেগেই আছে। ওদের শান্ত করার জন্য আমাকে বাধ্য হয়ে এ পথ বেছে নিতে হয়েছে। তবে কাউকে বিনা দোষে হয়রানি করা হবে না।’
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় দুই পুলিশকে ঘুষি মেরে হাতকড়াসহ পালিয়ে যায় মো. বরকত নামের এক যুবক। আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের বেড়ির হাটি গ্রামে ৪ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে এসআই মঞ্জুর হোসেন ও এএসআই মো. জামাল উদ্দিন আহত হন।
এ ঘটনায় ৫ জুন সকালে আলফাডাঙ্গা থানার এসআই প্রশান্ত কুমার বাদী হয়ে উপজেলার ৬ নম্বর পাঁচুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস এম মিজানুর রহমানসহ ৪৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১০০-১২০ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ।
এসজে/জিকেএস