এক ইউনিয়নে ৯ ইটভাটা, কমছে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে গাছপালা
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় একের পর এক গড়ে উঠছে ইটভাটা। এতে কমে আসছে ফসলি জমি। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতি হচ্ছে ফসল ও গাছপালার। রয়েছে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা। নতুন ভাটা স্থাপনের কাজে ট্রাক্টরে মালামাল আনা-নেয়ার কারণে ভেঙে যাচ্ছে সড়কও। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন স্থানীয়রা।
শনিবার (৫ জুন) আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকালে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট ১১টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। যার বেশিরভাগই অনুমোদন নেই। চর আমানুল্যাহ ইউনিয়নেই রয়েছে ৯টি ভাটা। এর মধ্যে সাতাশদ্রোন গ্রামে আড়তদার আবুল কাশেমের রয়েছে চারটি ইটভাটা।
এদিকে, বৈরাগীর বাজার-কচ্ছপিয়া সড়কে নতুন ইটভাটা স্থাপন করছেন জেলা শহরের দত্তেরহাট এলাকার মো. আলমগীর হোসেন। ওই ভাটার চারপাশেও কৃষিজমি, এলজিইডির পাকা সড়ক, সামাজিক বন ও জনবসতি রয়েছে। খলিল কোম্পানি ও ব্যবসায়ী মান্নান মিয়া ওই এলাকায় আরেকটি ইটভাটা করছেন।
ইটভাটা স্থাপনে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক। ইটভাটার এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সামাজিক বনায়ন, জনবসতি, কৃষিজমি, পৌরশহর, উপজেলা সদরদপ্তর ও স্কুল-কলেজ থাকলে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়া নির্ধারিত স্থানের অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে এলজিইডির কোনো সড়ক থাকলে ইটভাটার ছাড়পত্র না দেয়ার বিধান থাকলেও এসবের কোনটাই এখানে মানা হচ্ছে না।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, ‘ইটভাটা থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে আশপাশের জমিতে ফসল উৎপাদন কমতে থাকে, উপকারী পোকা-মাকড়ের মৃত্যু হয়। বনায়ন ধ্বংস হয়। মানুষের শ্বাসরোগ ও চর্মরোগ দেখা দেয়। ভাটা এলাকায় সব সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় আশপাশ অন্ধকার হয়ে যায়। সামাজিক বনায়ন ও বিভিন্ন বাড়ির ফলদ-বনজ গাছপালাগুলোর পাতা হলুদ হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে ভাটার ছাইয়ের দুর্গন্ধে আশপাশে টেকা দায়।
অন্যদিকে নতুন ভাটা স্থাপনের কাজে ট্রাক্টরে মালামাল আনা-নেয়ার কারণে সড়কগুলো ভেঙে যাচ্ছে। দরবেশ বাজার রাস্তার মাথা-দাশেরহাট সড়কটিতে ভাঙন ধরেছে। নির্মাণাধীন ইটভাটার উত্তরে দরবেশ বাজার রাস্তার মাথায় দুবছর আগে আরও একটি ইটভাটা স্থাপন করেন স্থানীয় কাশেম। ওই ইটভাটার চারপাশে কৃষিজমি, অসংখ্য বসতিঘর ও হাটবাজার রয়েছে। তিনদিক ঘেঁষে রয়েছে এলজিইডির সড়ক, সড়কের পাশে সামাজিক বন।
নোয়াখালী জেলা ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সভাপতি ইসমাইল মিয়া জানান, সুবর্ণচরে কোনো অবৈধ ইটভাটা আছে বলে তার জানা নেই।
ইটভাটা নির্মাণ নীতিমালা সংশোধনের দাবি করে তিনি বলেন, ‘ইটভাটার কারণে রাস্তাঘাট নষ্ট হতেই পারে, এসব আবার মেরামত করা হচ্ছে। ইটভাটা থেকে সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে থাকে। যারা কর ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের করের আওতায় আনা হোক।’
চর আমানুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন জানান, এলাকার ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ তাদের ফার্মের নামে ব্যবসার লাইসেন্স (ট্রেড লাইসেন্স) নিয়েছেন। এরা কেউ ইটভাটার অনুমতি নিয়েছে কি-না তিনি তা জানেন না।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণচরে আইডা এবং আমানত ব্রিকস ছাড়া বাকি সব ইটভাটা অবৈধ। অন্য কেউ ইটভাটার অনুমতির জন্য আবেদনও করেনি।
পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক মিঞা বলেন, ‘সুবর্ণচরের নতুন ইটভাটা নির্মাণের বিষয়ে সঠিক তথ্য নিশ্চিত হয়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম ইবনুল হাসান ইভেন বলেন, ‘শুনেছি উপজেলায় ছয়-সাতটি ইটভাটা রয়েছে। বিস্তারিত খবর নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসজে/জিকেএস