তিস্তার সেচে বাম্পার ফলন, প্রতি বিঘায় ২৮ মণ ধান পেয়েছেন কৃষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০২:৫৭ পিএম, ০৫ জুন ২০২১

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচের পানিতে রংপুর অঞ্চলে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এলাকার প্রতিটি কৃষকের গোলা ভরা ধান আর ধান। প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ২৮ মণ করে ধান ঘরে তুলেছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, সেচ ক্যানেলের পানি উৎপন্ন ধানের হিসেবে রংপুর অঞ্চলে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ধান কৃষক ঘরে তুলতে পেরেছেন। এতে পাঁচ জেলায় সম্ভাব্য উৎপাদন ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যে জমি থেকে সব ধান কৃষকরা কাটাই মাড়াই শেষে ঘরে তুলেছেন। মনের মতো ধান পেয়ে খুশি তারা।

এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকার সেচে নীলফামারী সদর, জলঢাকা, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, সৈয়দপুর,পার্বতিপুর, গঙ্গাচড়া উপজেলাসহ ৪৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়। এতে কৃষকরা বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয় করতে পেরেছে ৫০ কোটি টাকা।

তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম এমন হিসাব তুলে ধরে জানালেন বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রে যদি একজন কৃষক এক হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করে তাহলে সেচ খরচ হবে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। আবার ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রে যদি এক হেক্টর জমিতে সেচ দেয় তাহলে কৃষকের খরচ হয় ১৪ হাজার টাকা। সেখানে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকার সেচে এক হেক্টরে কৃষকের খরচ পড়ে মাত্র ১ হাজার ২০০ টাকা।

jagonews24

অপরদিকে তিনি উৎপাদনের ধানের হিসাবে জানান, বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত সেচে কৃষক এক হেক্টরে ধান পাবে ৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। তিস্তার সেচে কৃষক প্রতি হেক্টরে ধান উৎপাদন হচ্ছে ৬ মেট্রিক টন। এতে ৪৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তিস্তার সেচে ধান উৎপাদন করে কৃষকরা ৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে। আবার ধান উৎপাদন করেছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল বলেন, ‘বোরো ধানের সময় তিস্তা নদীতে চাহিদা মোতাবেক যদি উজান থেকে পানি পাওয়া যেত তাহলে আমরা প্রথম ফেজের ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান করতে পারতাম। উজানের পানি স্বল্পতায় আমরা ৪৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে সক্ষম হয়েছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া ডিভিশন কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, শুষ্ক মৌসুমে উজানের পানি কম পাওয়ার পরও কৃষকরা গড়ে প্রতি বিঘা জমিতে ২৫-২৮ মণ করে ধান ঘরে তুলছেন।

কৃষকরা জানান, বিঘা প্রতি কেউ ২৫ মণ কেউবা ২৮ মণ পর্যন্ত ধান পেয়েছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় তারা সেচের পানি দিয়ে গত এক দশক থেকে বাম্পার ফলন ফলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘আমাদের তিস্তা সেচ প্রকল্পের এলাকার কোনো জমির ধান নষ্ট হয়নি।’

v

নাউতরা গ্রামের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় সেচ প্রকল্পের পানি বেশি থাকার কারণে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমার ৮ বিঘা জমিতে ২১৬ মণ ধান পেয়েছি।’

রংপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার রংপুর কৃষি অঞ্চলে পাঁচ জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ ২ হাজার ৫২৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উৎপাদন হয়েছে নীলফামারীতে ৮২ হাজার ১১০ হেক্টর, রংপুরে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ১ লাখ ৯ হাজার ৬১২ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ১০ হাজার ৫০২ হেক্টর ও লালমনিরহাটে ৫০ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। যার গড় ফলনে চালের উৎপাদন হবে ২০ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৪ মেট্রিক টন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী (উত্তরাঞ্চল) জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘তিস্তা সেচ প্রকল্প উত্তরাঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির তৃণমূল পর্যায়ে সেচের পানি পৌঁছে দিতে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সেকেন্ডারি আর টারসিয়ারি সেচ ক্যানেল নির্মাণে একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে। সেকেন্ডারি সেচ ক্যানেলগুলোতে করা হবে সিসি লাইনিং আর টারসিয়ারি ক্যানেলগুলোতে দেয়া হবে আরসিসি ঢালাই। এতে পানির অপচয় ছাড়াই খুব দ্রুত পানি পৌঁছে যাবে জমিতে।’

জ্যোতি প্রসাদ বলেন, ‘তিনি বলেন চলতি বছর তিস্তা সেচ ক্যানেলে মাধ্যমে ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়েছিল। সেচ ক্যানেলে পানিতে সরকারি হিসেবে ১ হাজার ২০০ কোটির বেশি টাকার ধান উৎপাদ করেছে উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা। যা কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’

জাহেদুল ইসলাম/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।