খসরুর আসনে নৌকার মাঝি হতে চান ৩৬ জন, রয়েছেন স্ত্রীও
ভারত লাগোয়া বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৫ সংসদীয় আসন। এতে ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু মৃত্যুতে ২ জুন আসনটিতে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
১৫ জুন এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ। সময় যত ঘনিয়ে আসছে উপনির্বাচনকে ঘিরে জেলাজুড়ে চলছে আলোচনা। কে পাবেন এ আসনের নৌকার মনোনয়ন, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।
দলীয় মনোনয়ন পেতে অন্তত তিন ডজন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলা ও ব্যবসায়ী উপর মহলে লবিংসহ নানা দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকেই কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণায় সরব রয়েছেন। তবে সব প্রার্থীর বক্তব্য ‘নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তারা কাজ করবেন।’
১৪ এপ্রিল কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু মারা যান। ২১ এপ্রিল আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। তিনি এ আসন থেকে মোট ৫ বার (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ দেশ ও এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে গেছেন। তফসিল অনুযায়ী ১৪ জুলাই এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আলোচনা ও প্রচারণায় শীর্ষে রয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন।
এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত মতিন খসরুর অন্যতম রাজনৈতিক শিষ্য বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল হাশেম খান, মতিন খসরুর স্ত্রী সেলিমা সোবহান খসরু, ছোট ভাই জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার, বুড়িচং আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, সহসভাপতি মো. শাহ জালাল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমী, এফবিসিআই পরিচালক ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হেলেনা জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা ও সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুস ছালাম বেগ, ইকরা ফুটওয়ার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম, শিল্পপতি এম. এ মতিন, সাবেক ছাত্রনেতা ও শেখ হাসিনা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আবদুল জলিল, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানু, বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এম.এ মতিন (এমবিএ), শেখ হাসিনা কর্তৃক মনোনীত ২০০৯-১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিনেট নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগ কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট জাহিদুল আলম জাহিদ, জাতীয় পার্টির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির নেতা গোলাম বায়েজীদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা মো. নাছির উদ্দীন, সাংবাদিক এটিএম তরিকত উল্লাহ (তরিকত), তরুণ ছাত্রনেতা মো. আবদুল জলিল, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. এম এ কাদের খানসহ আরও অনেকে।
সাজ্জাদ হোসেন স্বপন বলেন, ‘ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে খসরু ভাইয়ের পাশে ছিলাম। প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে খসরু ভাইকে বিজয়ী করেছি। তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে দলীয় মনোনয়ন চাইব। তবে সবচেয়ে বড় কথা, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেন তার পক্ষে কাজ করব।’
প্রয়াত অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর স্ত্রী সালমা সোবহান খসরু বলেন, ‘আমার স্বামীর স্মৃতি ধরে রাখতে নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। আশা করি তিনি আমাদেরকে হতাশ করবেন না। স্বামীর মতো আমিও বাকি জীবনটা মানুষের সেবা করতে চাই।’
অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান বলেন, ‘প্রয়াত এমপি মতিন খসরুর সঙ্গে আমার পথচলা ১৯৬৯ সাল থেকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৫২ বছর একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। একদিনের জন্যও কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি। গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে নেত্রী যাকে নৌকার বৈঠা দিবে তার পক্ষে মাঠে কাজ করব।’
অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস বলে, ‘ভাইয়ের রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব।’
জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। খসরু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে। আশাকরি দল সুবিবেচনা করবেন।’
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ইচ্ছা আছে। যদি উপর মহল টিকিট দেন।’
বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মতিন খসরু এমপির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে মনোনয়ন চাইব।’
আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, ‘আমি গতবার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। এবার ইনশাআল্লাহ শতভাগ নিশ্চিত জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন।’
আবু সালেক মোহাম্মদ সেলিম রেজা সৌরভ বলেন, ‘আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের উত্তরসূরি হতে চাই। বাকিটা নেত্রীর ওপর।’
অধ্যক্ষ মো, আলী চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমি শিক্ষক নেতা হিসেবে বিগত তিনবার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। এবারও চাইব। যদি পাই তবে প্রয়াত এমপি মতিন খসরু অসমাপ্ত কাজ শেষ করব।’
এহতেশামুল হাসান ভূইয়া রুমি বলেন, ‘নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবেন আমরা তার পক্ষে কাজ করব।’
ব্যারিস্টার সোহরাব খান চৌধুরী বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী হিসেবে একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এলাকায় গ্যাস সংযোগসহ খসরু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই।’
ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন বলেন, ‘প্রয়াত নেতার আসন থেকে নির্বাচন করতে চাই। আশাকরি মনোনয়ন পাব।’
মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ইচ্ছুক প্রার্থী হতে। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব।’
অ্যাডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়ন চাইব।’
শাহ জালাল মজুমদার প্রার্থী হতে নিজ ইচ্ছের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি এ আসনে দলের পক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন চাইব।’
বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ডিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান এম.এ মতিন (এমবিএ) বলেন, ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে আমি অবশ্যই কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইব। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।’
অ্যাডভোকেট জাহিদুল আলম জাহিদ বলেন, ‘গুণী নেতার আসনে একজন প্রার্থী হিসেবে নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই জনগণের মাঝে।’
সাংবাদিক এটিএম তরিকত উল্লাহ তরিকত বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। অনুমতি দিলে উন্নততর নীতি ও সততা নিয়ে কাজ করে সমাজে চমক সৃষ্টি করতে চাই।’
দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে কুমিল্লা (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক রেলপথ মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সর্ববৃহৎ সংগঠন। এখানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা অনেক বড় হবে। এটা কোন সমস্যা না। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন আশা করছি তার পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।’
এসজে/এএসএম