বরগুনায় কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার
বরগুনায় তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে বেদম প্রহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ওই শিক্ষার্থীকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনার কলেজ রোডের বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।
আহত ওই শিক্ষার্থীর নাম ইসরাত জাহান মালিহা (৯)। সে বরগুনার ক্যালিক্স একাডেমির তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। প্রহারের কারণে মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ৩৩টি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. জহিরুল ইসলাম বাদল। তিনি বরগুনার রোডপাড়া শহিদ স্মৃতি সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে পরিচালক। এ ঘটনার পর বাদল পলাতক থাকায় দুই সন্তানসহ তার স্ত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
আহত মালিহাকে দেখতে এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিতে শুক্রবার সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যান বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম।
এদিকে মালিহার বার্ষিক পরিক্ষা চলছে। তাই মালিহা আগামীকালের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
মালিহার বাবা মো. জামাল সিকদার বলেন, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার বিকেলেও মালিহা বিজয় বৃত্তি কোচিং সেন্টারে কোচিং করার জন্য যায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে কোচিং সেন্টারের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম বাদল মালিহাকে একটি অংক করতে দেন। মালিহা অংকটি করতে না পারায় তিনি মালিহাকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করেন। প্রহারের এক পর্যায়ে মালিহা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর মালিহার জ্ঞান ফিরলে বাদল তাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য ভয়-ভীতি দেখান।
তিনি আরও বলেন, কোচিং শেষে রাত ১০টার পর মালিহা বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় তারা মালিহার গায়ে প্রচুর প্রহারের চিহ্ন দেতে পান। পরে তারা মালিহাকে নিয়ে বরগুনা সদর থানায় আসেন। এ খবর শুনে বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকও সদর থানায় উপস্থিত হয়ে বাদলকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য তার গাড়িতে করে মালিহাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মালিহার মামা মো. বেলাল হোসেন বলেন, মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অর্ধ-শতাধিক প্রহারের চিহ্ন রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি স্থানে প্রাহরের ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এসব ক্ষত দিয়ে রক্ত ঝরছে।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, মালিহার চিকিৎসায় যাতে কোনো ত্রুটি না হয় সে ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বাদলে বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তার কোচিং সেন্টারটিও বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
মালিহার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. রুস্তুম আলী বলেন, মালিহার শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য প্রহারের চিহ্ন আছে এবং বেশ কিছু স্থানে প্রহারের ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গতকালের চেয়ে মালিহার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন পিপিএম বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জহিরুল ইসলাম বাদল পলাতক থাকায় তার স্ত্রী ও দুই ছেলেকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আর বাদলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান ওসি রিয়াজ হোসেন পিপিএম।
সাইফুল ইসলাম মিরাজ/এসএস/আরআইপি