৪ দফা ভূমিকম্প : ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরাতে সিলেটে শুরু হচ্ছে অভিযান
ভূমিকম্পের ‘ডেঞ্জার জোন’ সিলেটে দেশের ইতিহাসে এই প্রথম চার ঘণ্টায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। দফায় দফায় এমন ভূ-কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বমহলে।
আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন- সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।
এ ঘটনার পর সিলেট সিটি করপোরেশন, প্রশাসন, দমকলবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা নড়েচড়ে বসেছেন। বিকেলে নগরভবনে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
নগরের বেশকিছু ভবন কয়েকবছর থেকেই সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে। শনিবার (২৯ মে) নগরে চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় আবারও আলোচনায় এসেছে সিসিকের তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ শতাধিক ভবন।
ভূমিকম্প পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় সিসিকের আগাম জরুরি বৈঠক শেষে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেটে আজ কিছুক্ষণ পরপর ভূমিকম্প হয়েছে। সেটিকে আমরা এলারমিং হিসেবে নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা একটি টিম গঠন করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ নিয়ে ওই টিম আগামীকাল রোববার সকাল থেকে নগরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অভিযান পরিচালনা কবে। যেগুলো সরানো যায়, সেগুলো সরানো হবে।
মেয়র আরও বলেন, যেসব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো সম্ভব নয়, সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। অভিযানে মেয়র আরিফ নিজেও উপস্থিত থাকবেন বলেও জানান।
ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার কারণে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর ও শাখার সঙ্গে জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, অল্প সময়ের ব্যবধানে অন্তত চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে। সেই অনুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশন দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর ও শাখার সঙ্গে এ জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন এমনটি জানান মেয়র।
সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ পরিস্তিতিতে সিলেট সিটি করপোরেশন নিজস্ব একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সিলেট মহানগরে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সব বিভাগ, শাখা ও দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা। খোলা হয় একটি হটলাইন। যার নম্বর- ০১৯১১২৪৯৬৯৯।
সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সরকারের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সিলেটের সব প্রশাসন, দফতর ও সেবা সংস্থাসমূহে নিজ নিজ কন্ট্রোল রুম খুলতে অনুরোধ জানানো হয়।
আগামী ৭ দিনের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশনসহ সব জরুরি সেবা সংস্থাসমূহ ও সহযোগী সকল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থায় থাকার অনুরোধ জানানো হয়।
বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, স্বাস্থ্য সেবা খাত এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে সিলেটের সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকের দুর্যোগকালীন সময়ে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া সিসিকের তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে নাগরিকদের নিরাপদে অবস্থানে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নূর আজিজুর রহমান, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়, সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আব্দুল আজিজ, জালালাবাদ গ্যাসের ডিজিএম (মেট্রো.) প্রকৌশলী খান মো. জাকির হোসাইন, এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. আজবাহার আলী, সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রমুখ।
শনিবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সিলেট অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। সিলেটের জৈন্তায় আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে সবগুলোই ছোটো ধরণের ভূমিকম্প।
তিনি বলেন, দেশের ইতিহাসে এর আগে একই অঞ্চলে একদিনে চারবার ভূমিকম্প হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। ২০২০ সালের এপ্রিলে সিলেট অঞ্চলে আরেকটা ভূমিকম্প হয়েছিল। এগুলো ছোট মাত্রার ভূমিকম্প।’
মমিনুল ইসলামের তথ্যমতে, আজ সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে রিখটার স্কেলে ৩ মাত্রার, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে ৫৩ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ১ মাত্রার, ১১টা ২৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলে ২ দশমিক ৮ মাত্রার এবং ১টা ৫৮ মিনিটে ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে।
এদিকে, সিলেটে ঘন ঘন ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পররষ্ট্রমন্ত্রী, সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা।
ছামির মাহমুদ/এএএইচ/জিকেএস