তলিয়ে গেছে কুতুবদিয়ার লোকালয়, আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েক হাজার মানুষ
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও ভরা পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল, উত্তর ও দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম।
বুধবার (২৬ মে) সকালে ঝোড়ো বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
জোয়ারের পানি ঢুকেছে দ্বীপের একমাত্র বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা তাবালেরচরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশকিছু পয়েন্ট দিয়ে। এতে তলিয়ে গেছে লবণের মাঠসহ একাধিক পাড়া-গ্রাম। তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘরের হাজারো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। এমনটিই জানিয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরের জামান।
সূত্র জানায়, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া, কিরণপাড়া, কাজীপাড়া, টেকপাড়া, তেলিপাড়া, দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়নের আলী ফকির ডেইল, উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কাইসারপাড়া, নয়াকাটা, ওয়াইজার পাড়া বেশি প্লাবিত হয়েছে। উত্তর ধুরুং প্লাবিত হলেও বাড়িঘরের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে, আলী আকবর ডেইলে লোকালয়ে আসা পানিতে তলিয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। দুর্গত এসব বাসাবাড়ির মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন।
ধুরং এলাকার বাসিন্দা হাছান মাহমুদ সুজন জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি প্রবাহিত হয়ে এলাকায় ঢুকে বসতভিটা ও পুকুর তলিয়ে যায়। এতে দ্বীপের অসংখ্য পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ফলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয়রা।
উত্তর ধুরং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম শাহারিয়ার চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে। তার ওপর ভরা পূর্ণিমার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। এতে ইউনিয়নের পশ্চিম চর ধুরং, পূর্ব চর ধুরং, নয়াকাটা মিয়াজির পাড়া ও কুড়ার পাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধ বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী জানান, কুতুবদিয়া দ্বীপের আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ১ ও ২নং ওয়ার্ড়ের পশ্চিম আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাজির পাড়া, কাহার পাড়া, নাশিয়ার পাড়া, তেলি পাড়া, পণ্ডিত পাড়া, বাছিয়ার পাড়া, হায়দার বাপের পাড়া ও টেকপাড়া গ্রামের কয়েকশ ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের সহায়-সম্পদ সাগরের জোয়ারের লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, এই দুই ওয়ার্ড়ের কয়েক হাজার মানুষ আলী আকবর ডেইল উচ্চ বিদ্যালয় ও কুতুবদিয়া আউলিয়া দাখিল মাদরাসার ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। এই ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি অবিলম্বে দ্বীপের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরের জামান চৌধুরী জানান, সরেজমিন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দুর্গতদের সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এএসএম