হরতাল-অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচির হুমকি সন্তু লারমার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:০৫ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৫

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে এবং চুক্তিবিরোধী ও জুম্মস্বার্থ পরিপন্থী ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে জনসংহতি সমিতির চলমান অসহযোগ আন্দোলন আরও তীব্রতর করার আহ্বান জানিয়েছেন সন্তু লারমা। সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়ে সন্তু লারমা বলেন, আন্দোলন জোরদারে জনসংহতির ডাকে পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে হরতাল, অবরোধ, অফিস-আদালত বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটসহ লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

২০১৬ সালের ১ জানুয়ারির পর থেকে কর্মসূচি একের পর এক পালিত হবে এসব কঠোর কর্মসূচি। বুধবার পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙ্গামাটিতে অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে এসব আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দেন তিনি।

সমাবেশে তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে যোগ দেন জনসংহতি সমিতির বিশাল কর্মী-সমর্থকসহ অগণিত আদিবাসী জুম্ম নারী ও পুরুষ। বিভিন্ন জায়গায় আসার পথে সেনাবাহিনীর বাধার মুখে আরও হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দিতে পারেননি বলে প্রধান অতিথি সন্তু লারমাসহ বক্তব্যে অভিযোগ করেছেন নেতারা। সমাবেশে সমবেত জুম্ম জনতার উদ্দেশে প্রায় ঘন্টাব্যাপী দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন জনসংহতি সমিতির প্রধান ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা।

jagonews24
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাস্তবতা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত নাজুক। ১৮ বছর পরেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জুম্ম জনগণকে লড়াই সংগ্রাম করতে হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারের লোকজন ও দালাল গোষ্ঠী পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে দাবি করে মিথ্যা বেসাতি করলেও বাস্তবে মৌলিক শর্তসহ চুক্তির অধিকাংশই অবাস্তবায়িত। সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে তথা শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিকভাবে সমঝোতার জন্য ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু সরকার গত ১৮ বছর ধরে সমাধানের পরিবর্তে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে একের পর এক নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির পরিবর্তে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে- যে কারণে জুম্ম জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতায় বাস করছে।

তিনি বলেন, চুক্তির ১৮ বছর পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণসহ সেনা ও নিরাপত্তা ছাউনি বাড়িয়ে পরোক্ষভাবে সেনাশাসন জারি রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে শত শত সেনা ও বিজিবি ক্যাম্প সম্প্রসারণ করে জুম্মদের হাজার হাজার একর জায়গা-জমি বেদখলে নিচ্ছে সরকার। চুক্তি অস্থায়ী সবগুলো সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারে কথা থাকলেও এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৩৫টি ক্যাম্প তুলে নেয়া হয়েছে। উপরন্তু ৩৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার পর আরও নতুন করে ৬৫টি সেনাক্যাম্প বসানো হয়েছে।

সন্তু লারমা সমবেত জুম্ম জনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা মুক্তির জন্য একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। পাকিস্তান শাসনামলে স্বাধিকার আন্দোলন করেছি। অধুনা বাংলাদেশ শাসনামলে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলন গড়ে তুলি। আন্দোলনের বিশ বছর পর পার্বত্য চুক্তি হয়েছে। জুম্ম জনগণ ভেবেছিল পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে শান্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কিছুই হয়নি। এ অবস্থায় বসে থাকলে হয় বাঙালি না হয় দেশান্তরী হতে হবে। আমরা কোনো অবস্থাতেই বাঙালি বা মুসলিম হতে পারি না। পার্বত্য চট্টগ্রামের এমন বাস্তবতা মোকাবিলায় আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। সেই লক্ষ্যে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে সেটাকে আরও কঠিন ও তীব্রতর করতে হবে। আন্দোলনে জুম্ম জনতা সবাইকে একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান সন্তু লারমা।

jagonews24
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ তাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো উপায় নেই। আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে হবে। শাসকগোষ্ঠী আমাদের দাবি মেনে না নিলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বুকে আগুন জ্বলবে। আবার অশান্ত হয়ে উঠবে পার্বত্য চট্টগ্রাম। দীর্ঘ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলমান অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন সন্তু লারমা।

জনসংহতি সমিতির সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ককাস সভাপতি ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হাসান বাদশা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাহমান নাসির উদ্দিন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্র সরেন।

এছাড়া জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কেএস মং, স্টাফ সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা। সমাবেশ পরিচালনা করেন সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা ও জলি মং মারমা।

সুশীল প্রসাদ চাকমা/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।