‘ছাত্রলীগের বাধায়’ যোগ দিতে পারেননি বিএম কলেজের নতুন উপাধ্যক্ষ
বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পাওয়া অধ্যাপক কাইউম উদ্দিন আহমেদ কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাধার মুখে তিনি যোগ দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।
রোববার (২৩ মে) দিনভর কলেজের প্রশাসনিক ভবনের ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। পাশাপাশি তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবন ও উপাধ্যক্ষের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এছাড়া ৮-১০ জন করে যুবক কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। যাদের বেশিরভাগ ছিল বহিরাগত। বিক্ষোভের সময়ে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনীমকে কলেজ অধ্যক্ষর কক্ষে অবস্থান করতে দেখা গেছে বলে একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে অধ্যাপক কাইউম আহমেদ যোগদান না করেই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএম কলেজের সামনে থেকে ফিরে আসেন।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২০ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের পাঁচটি সরকারি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ ও দু’টি কলেজে উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপকদের। এই নিয়োগে অধ্যাপক কাইউম উদ্দিন আহমেদ ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান পদ থেকে উপাধ্যক্ষ পদে পদোন্নতি পান।
কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার সকাল থেকে একদল যুবক কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। যাদের বেশিরভাগ ছিল বহিরাগত। সকাল ১০টার দিকে তারা কলেজের প্রশাসনিক ভবনের গেটে অবস্থান নিয়ে সদ্য পদোন্নতি পাওয়া উপাধ্যক্ষ মো. কাইউম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এসময় বিক্ষোভ থেকে কাইউম উদ্দিনকে দুর্ণীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তারা স্লোগান দিতে থাকেন। বিকেল পর্যন্ত তারা কলেজে অবস্থান করেন।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ মুনীমের নেতৃত্বে বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। তার অনুসারী কর্মীরাই ক্যাম্পাসে নবাগত উপাধ্যক্ষবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন।
উপাধ্যক্ষ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ও ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্স শেষবর্ষের ছাত্র ইয়াসির আরাফাত বলেন, কাইয়ুম উদ্দিন ২০০৯ সাল থেকে টানা ১০ বছর বিএম কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সম্পাদক থাকাবস্থায় দুর্নীতি করেছেন। কলেজ তহবিল থেকে দুর্নীতি করে টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া তখন অস্থায়ী ছাত্র কর্মপরিষদ গঠন ও অধ্যক্ষ শংকর চন্দ্র দত্তের ওপর হামলার অন্যতম হোতা ছিলেন তিনি। তিনি উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করলে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ পাশে ছিল, এখনো আছে।
তবে অধ্যাপক কাইউম উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেছেন, একটি মহল মনে করছেন তিনি তাদের আদর্শের পরিপন্থী। তারাই ষড়যন্ত্র করছেন। তাদের ইন্ধনে যোগদান ঠেকাতে শনিবার রাত থেকে ক্যাম্পাস দখল করে রেখেছে কতিপয় ছাত্র নেতা।
তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষও তার ফোন ধরছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আমি যোগদানের জন্য আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করব।’ এ আন্দোলনের পেছনে শিক্ষক পরিষদের কয়েকজন নেতার ইন্ধন আছে বলেও অভিযোগ করেন অধ্যাপক কাইউম উদ্দিন।
বিএম কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, অধ্যাপক কাইউম উদ্দিন তাকে ফোনে জানিয়েছিলেন যে, তিনি রোববার উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করবেন। তার যোগদানের বিরোধিতা করে সকালে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করেছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ধরণের ঘটনা এড়াতে আমি তাকে আপাতত ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেছি। সমস্যা নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
সাইফ আমীন/এএএইচ