বেনাপোল চেকপোস্টে বিজিবির হয়রানি


প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

বন্ডেড এরিয়ার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পাসপোর্ট যাত্রীদের তল্লাশি করার কোনো এখতিয়ার না থাকা সত্ত্বেও জোর করে কাস্টমসের আইন উপেক্ষা করে পাসপোর্টযাত্রীদের হয়রানি করার অভিযোগ করেছেন ভারত ফেরত যাত্রীরা।

প্রতিনিয়ত বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্র থেকে পাসপোর্টযাত্রীরা লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাদা পোষাক পরিহিত বিজিবি সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে লাগেজ তল্লাশি চালাচ্ছেন। আবার একই যাত্রীকে দুই কিলোমিটার দূরে আমড়াখালি বিজিবি চেকপোস্টে লাগেজ গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্লাশি করছেন। এ নিয়ে ভয়ে পাসপোর্টযাত্রীরা কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। কেহ প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে তার আনিত বৈধ মালামাল বিজিবির ছাপানো মেমোতে উল্লেখ করে জব্দ করে দেন।

পরে ওই যাত্রীকে আবার বেনাপোল কাস্টমস থেকে এ মাল ছাড়াতে হয়। প্রতিনিয়ত এ ঘটনা ঘটে। কাস্টমস কর্মকর্তারা এতদিন নীরব থাকলেও সোমবার দুপুরে ভারত থেকে আসা কলকাতা-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী সৌহার্দ্য পরিবহনে (ডাব্লিউ বি ২৩ বি-৯২২৩) বিজিবির তল্লাশি নিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রতিবাদ জানালে বিজিবির সঙ্গে তাদের তর্ক যুদ্ধ লেগে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস গেটে। এসময় শত শত পাসপোর্টযাত্রীসহ উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় জমান।

সাধারণ যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন বেনাপোল আন্তর্জাতিক কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্রে তাদের লাগেজ তন্ন তন্ন করে চেক করার পর আবারও গেটের বাইরে এলে বিজিবির হয়রানির শিকার হতে হয়। সরকারি দুটো সংস্থার লোক ভিন্ন ভিন্ন আইন করায় তাদের হয়রানির স্বীকার হতে হচ্ছে হরহামেশা। যেটা বেনাপোল কাস্টমস গেটে বিজিবি করে থাকে।

সোমবার দুপুর ১২টার সময় বিজিবির হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভারত থেকে চিকিৎসা ফেরত লক্ষ্মীপুর জেলার ক্যান্সার রোগী কার্তিক সাহা। তার পাসপোর্ট নং বিএইচ- ৬৯৭১১৯ ও তার ছেলে সুমন সাহা পাসপোর্ট নং বিএইচ ০৬৯৬০৭৪। এছাড়া গাড়িতে থাকা প্রায় অর্ধশতাধিক পাসপোর্ট যাত্রীরা বিজিবির বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেন।

তারা বলেন, বৈধ পথে সরকারকে ৫শ` টাকা রাজস্ব দিয়ে ব্যবসায়িক, চিকিৎসা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো এবং দর্শনীয় স্থানে বেড়িয়ে দেশে ফিরলে বেনাপোল কাস্টমস গেটে বিজিবি কর্তৃক হয়রানির শিকার হতে হয়। তারা জানান, যদি বিজিবির সন্দেহ হয় তাহলে সরকার কেন কাস্টমসের তল্লাশি কেন্দ্রে তাদের চেক করতে না বসিয়ে একাধিকবার যাত্রীদের হয়রানি করে। বেনাপোল থেকে যশোর যেতে ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার পর আমড়াখালি নামক স্থানে বিজিবি চেকপোস্টে আবারও তাদের লাগেজ খুলে হয়রানি শুরু করে। তারপরও বিজিবির স্পেশাল টহল দল পথের বিভিন্ন জায়গায় তাদের লাগেজ খুলে হয়রানি করে থাকে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্রের রাজস্ব কর্মকর্তা (সুপারিনটেনডেন্ট) সরনিকা চাকমার কাছে কাস্টমস এরিয়ার মধ্যে বিজিবি তল্লাশি করতে পারে কিনা জানাতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে জানান, বন্ডেড এলাকার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থার লোক কোনো যাত্রীকে হয়রানি করতে পারবে না। কিন্তু কাস্টমস থাকা সত্ত্বেও কেন বিজিবি যাত্রীদের হয়রানি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত দেখাতে বলেছি কিন্তু তারা লিখিত কিছু দেখাতে পারেননি। আইন অনুযায়ী তারা এটা করতে পারে না। তবে সাধারণ যাত্রীরা বলেছেন বিজিবি এক প্রকার কাস্টমসকে অসম্মান করে জোর করে ক্ষমতা বলে নিরীহ পাসপোর্ট যাত্রীদের হয়রানি করছে।

বেনাপোল চেকপোস্টের একটি সূত্র জানায়, বেনাপোল চেকপোস্টে বিজিবির নাকের ডগা দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ভারত থেকে মাদক ফেনসিডিলসহ অন্যান্য চোরাচালানী পণ্য আসলেও তাদের সেদিকে খেয়াল নেই। তারা কাস্টমস গেটের সামনে থেকে পাসপোর্টযাত্রীদের সঙ্গে আনা নানা পণ্য আটক করে এক টাকার পণ্য একশ টাকা নির্ধারণ করে কাস্টমে জমা দিয়ে বাহবা কুড়াচ্ছে।

এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার জালাল উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, আমরা আমদের সিও সাহেবের আদেশে রাস্তার উপর গাড়ি চেক করেছি। আমরা কাস্টমসের গেটের মধ্যে চেক করিনি। বন্ডেড এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে চেক করার নিয়ম আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা রাস্তায় যে কোনো জায়গায় চেক করতে পারবো।

মো. জামাল হোসেন/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।