জনবল ও চিকিৎসক সঙ্কটে রাজশাহী ডেন্টাল কলেজ
জনবল ও চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে উদ্বোধনের তিন বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিট শাখার নতুন ভবন। গত ২০১২ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক চারতলা বিশিষ্ট নতুন এই ভবনের উদ্বোধন করেছিলেন। কিছুদিন আগে থেকে ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অস্থায়ী ভিত্তিতে (ভবন যাতে নষ্ট না হয়) সেজন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাশ নেয়া হচ্ছে। বাকি অংশটুকু অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
নতুন এই ভবনের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় বাইরের সিঁড়িতে লাগানো তামার তৈরি পাত চুরি হয়ে গেছে। পুরো ভবনের চারতলা পর্যন্ত সিঁড়ির দিকটায় ঢাকা কাচের গ্লাস ভেঙে নিচে পড়ে আছে। গত ৫ জানুয়ারিতে বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় ভবনের উত্তরদিকের সিঁড়ির কাচ ইট নিক্ষেপ করে ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। ভবনের দক্ষিণ দিকের কাচ ঝড়ে ভেঙে গেছে। কিন্তু এখনো পরিস্কার করা হয়নি। দেখাশোনার অভাবে ভবনের বেশিরভাগ কাচের জানালা ভেঙে গেছে।
হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ডেন্টাল কলেজের ভেতরের দিকের চত্বর যত্রতত্র বেড়ে উঠা আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। চত্বরের মাঝে অনেকখানি জায়গা নিয়ে মেডিকেলের বর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে পুরাতন ভবনের নিচের বাথরুমের এক কোণায় ও দক্ষিণ দিকের সিঁড়ির এক কোনায় জড়ো করে রাখা হয়েছে হাসপাতালের বর্জ্য।
হাসপাতালের অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত দিনমজুর রবীন্দ্রনাথ সরকার জাগো নিউজক জানান, ২৫ বছর ধরে তিনি এখানে চাকরি করছেন, কিন্তু এখনো চাকরি স্থায়ী হয়নি। পরিস্কার করার লোক নেই। কে পরিস্কার করবে? তিনি একা মানুষ আর কত কাজ করবেন? হাসপাতালের সব কাজ তাকেই করতে হয়। স্যারদের চা খাওয়ানো থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজ। কিন্তু হাসপাতাল থেকে তাকে মাসে দেয়া হয় মাত্র তিন হাজার টাকা। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে অনেকের নিয়োগ হয়েছে কিন্তু তার নিয়োগ আজো হয়নি।
ডেন্টাল কলেজ সূত্র জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল ইউনিটে প্রতিবছর ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিভাগ আছে ছয়টি। সে হিসেবে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৫ জন। তাদের সবাই ডেপুটেশনে আছেন। প্রতি বিভাগে পাঁচজন করে শিক্ষক থাকার নিয়ম। সে হিসেবে শিক্ষক দরকার ৩০ জন। এই কলেজে গড়ে প্রতিদিন রোগী আসেন ৮০ থেকে ৯০ জন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সার্জারিগুলোও এখানে করা হয়। নিয়মিত কর্মচারী আছেন পাঁচজন, অনিয়মিত আছেন চারজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেন্টাল ইউনিটের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, ডেন্টাল ইউনিট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এরকম শুন্য অবস্থায় চলছে। তিনি এই কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তখন যে অবস্থা দেখেছেন, এখনো সেই অবস্থা বিরাজ করছে। কলেজের নিজস্ব কোনো পদ নেই। পর্যাপ্ত বাজেটও নেই। পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ হবার যে কথা ছিল তাও হচ্ছে না। ডেন্টাল কলেজ হবার মতো সবকিছু প্রস্তুত হয়ে আছে। শুধু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট অনুমোদন পেলে পূর্ণাঙ্গ ডেন্টাল কলেজ নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
বরেন্দ্র জাদুঘরের সামনে অবস্থিত এই ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে ফিল্ম না থাকায় রোগীদের বাইরে এক্স-রে করতে হয়। এক্স-রে করার জন্য মহানগরীর ঘোষপাড়া মোড়ে অবস্থিত এবি ডেন্টাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কলেজের রোগ নির্ণয় বিভাগ থেকে গোলাপি কার্ডসহযোগে পাঠানো হয়। স্কেলিং বিভাগের তিনটি মেশিনের মধ্যে দুইটি মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে একটা মেশিনে কাজ করার জন্য রোগীকে তার সিরিয়াল পেতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। কেউ যদি ডেন্টাল ইউনিটে স্কেলিং করতে চায় তাকে দুই থেকে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়।
এ ব্যাপারে ডেন্টাল ইউনিটের প্রধান ডা. নাহিদ খুররম চৌধুরী জাগো নিউজকে জানান, জনবল সঙ্কট ও আসবাবপত্রের অভাবে উদ্বোধনের তিন বছরেও নতুন ভবন চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি খুব শীঘ্রই সমাধান করা হবে।
এক্সে-রে বাহির থেকে করার বিষয়ে তিনি আরও জানান, এক্স-রে ফিল্ম না থাকায় এক্স-রে মেশিন পড়ে আছে। ফান্ডিং (অর্থ সহায়তা) পেলে দ্রুত ফিল্ম কিনে চালু করা হবে। এবি ডেন্টাল থেকে কার্ডগুলো দিয়ে গেছে। তিনি জানতেন না। জানার পরে রোগ নির্ণয় বিভাগের চিকিৎসকদের নিষেধ করে দিয়েছেন। রোগীর এত চাপ মেশিন দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ঠিক করার এক্সপার্ট না থাকায় স্টোররুমে অনেক নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/আরআইপি