কবিরাজের নারী রোগীদের জন্য আলাদা ঘর, অনৈতিক মেলামেশার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৮:২৪ পিএম, ১১ মে ২০২১

বরিশালের মুলাদী উপজেলায় সোলেমান সরদার নামের এক কবিরাজের বিরুদ্ধে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার মিথ্যা কথার ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষ। তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের।

নারী রোগীদের চিকিৎসার নামে ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে কবিরাজ সোলেমান সরদারের বিরুদ্ধে। এসব কথা কাউকে জানালে রোগীকে জ্বিন দিয়ে ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয়।

অভিযুক্ত সোলেমান সরদার উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের ব্রজমোহন গ্রামের মৃত নাজেম আলী সরদারের ছেলে। তিনি ৩০ বছর ধরে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন। নারী রোগীদের চিকিৎসার জন্য তার ঘরের পাশে রয়েছে আলাদা আরেকটি ঘর। ঝাড়ফুঁক দেয়ার কথা বলে সেখানে নারী রোগীদের নিয়ে বাধ্য করা হয় অনৈতিক মেলামেশায়।

ব্রজমোহন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, সোলেমান সরদার স্কুল বা মাদরাসায় যাননি। লেখাপড়া না শিখলেও ৩০ বছর ধরে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্যান্সার, এইডস, হৃদরোগ, পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, বাত, আমাশয়, মেহ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, যৌনরোগসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ শতভাগ নিরাময়ের আশ্বাস দিয়ে চিকিৎসা করে আসছেন। পাশাপাশি স্বামীকে বশ করা, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, জ্বিন তাড়ানো, মামলার রায় পক্ষে নেয়া, লটারি জয়, জমি বিরোধ দূর করা, শত্রুকে বান মেরে ফেলা, স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, চাকরি পাওয়াসহ বিভিন্ন কাজের শতভাগ সফলতার আশ্বাস দিয়ে সোলেমান সরদার তদবির দিয়ে আসছেন। গ্রামের মানুষ খুব সহজে সোলেমান কবিরাজের কথায় বিশ্বাস করে চিকিৎসা ও তদবির নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

তারা আরও বলেন, বিভিন্ন গ্রামে সোলেমান সরদারের লোক রয়েছে। তারা সোলেমান সরদারের কাছে রোগী পাঠান। এ বাবদ তাদের দেয়া হয় মোটা অংকের কমিশন। তার বিরুদ্ধে নারী রোগীদের ঝাড়ফুঁক দেয়ার কথা বলে আলাদা ঘরে নিয়ে তাদেরকে অনৈতিক মেলামেশায় বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের ভেদুরিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী জাকির হোসেন জানান, তিনি তার অসুস্থ স্ত্রী জান্নাত আরাকে নিয়ে সোলেমান ফকিরের কাছে গেলে জাদুটোনা করা হয়েছে বলে জানান। ১০ হাজার টাকা নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস চিকিৎসার পরেও সুস্থ না হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরে তার স্ত্রী সুস্থ হয়েছেন।

পার্শ্ববর্তী হিজলা উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের ছাত্তার বেপারীর স্ত্রী নূরজাহান বেগম জানান, ডাক্তার তার লিভারের সমস্যার কথা বলায় গ্রামের এক নারীর কথায় তিনি সোলেমান সরদারের কাছে যান। সোলেমান সরদার তার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়ে ঝাঁড়ফুক ও পানি পড়া দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এখনও সুস্থ না হয়ে উল্টো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নলমুরি ইউনিয়নের কোদালপুর গ্রামের কাসেম হাওলাদারের স্ত্রী মাজেদা বেগম জানান, তার মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে লোকমুখে শুনে সোলেমান সরদারের কাছে নিয়ে আসেন। মোটা অংকের টাকা দিয়ে দীর্ঘ চারমাস ধরে চিকিৎসার পরেও তার মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেনি।

এ বিষয়ে কবিরাজ সোলেমান সরদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমি এভাবে প্রায় সব রোগের তদবির দিয়ে আসছি। অনেক মানুষ ভালো হয়েছেন। কোনো রোগীকে আমার এখানে আসতে জোর করা হয় না। তারা উপকার পেলে খুশি হয়ে টাকা দেন। তাদের টাকা দিতে বাধ্য করা হয় না।’

নারী রোগীদের অনৈতিক মেলামেশায় বাধ্য করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জ্বিন-ভূতে ধরা বেশিরভাগ রোগীদের ঝাড়ফুঁকের সময় তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। হাতের কাছে যা পান তারা ভাঙচুর করেন। এজন্য তাদের আলাদা একটি ঘরে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়। তবে নারী রোগীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।’

বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা. হোসেন মনোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, ‘তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়ায় যদি সব রোগ ভালো হতো তাহলে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রয়োজন ছিল না। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার এটি একটি ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, তিনি থানায় নতুন যোগ দিয়েছেন। কবিরাজের এ ধরনের চিকিৎসার বিষয় তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ায় কথা জানান তিনি।

সাইফ আমীন/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।