নির্বাচনী মাঠে বাবা-ছেলের লড়াই


প্রকাশিত: ০১:৫২ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০১৫

পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর জামালপুর পৌরসভায় নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে। নির্বাচনকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছেন বড় দুটি দলের দুই মেয়রসহ শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে চলছে নানামুখী প্রচারণা। প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়ন প্রায় চুড়ান্ত হয়েছে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জামালপুর পৌরসভায় এবার অভিজ্ঞ দুই পৌর পিতার লড়াই হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আ.লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি দুইবারের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আর বিএনপি মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন পর পর দু’বার নির্বাচিত বর্তমান মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হওয়ায় আ.লীগ প্রার্থী খুশি থাকলেও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

জামালপুর পৌরসভার মেয়র পদটি পেতে আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। দু`বারের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি আওয়ামী লীগের একক মনোনয়ন প্রত্যাশি। মেয়র পদটি নিজেদের দখলে নিতে প্রায় এক বছর আগেই তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয় জেলা আ.লীগ। তাই পৌর নির্বাচনের জন্য দলে আর কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশি না থাকায় মেয়র পদে তার মনোনয়ন চুড়ান্ত। ইতোমধ্যে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জোর প্রচারণায় নেমেছেন।

শহর আওয়ামী লীগ পৌরসভায় বেশ কয়েকটি জনসভা করেছে। এসব জনসভায় বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে এসব জনসভায় বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। আ.লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি জামালপুর পৌরসভায় দু’বার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে বেশ উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে ১৯৯২ সালে পৌরসভার উদ্যোগে পাথালিয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে বাঁধ দিয়ে নদী ভাঙন থেকে জামালপুর শহরসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রক্ষায় তার বড় ভূমিকা রয়েছে।

এছাড়াও পৌর বাজারের উন্নয়ন, ডাস্টবিন, ড্রেন নির্মাণসহ নানা উন্নয়ন কাজ করেছেন। পৌরসভায় দু’বার পৌর পিতার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা আর বর্তমান সরকারের মন্ত্রী পরিষদে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে  থাকা ভাতিজা মির্জা আজমকে কাজে লাগিয়ে পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন আ.লীগের এই প্রার্থী।

আ.লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মির্জা সাখাওয়াতুল আলম মনি জাগো নিউজকে বলেন, দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচন হওয়ায় তিনি আনন্দিত এবং দলের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ করে দেয়ায় দলের নেত্রীর কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। পৌর নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে পৌরসভার সমস্যাগুলো সমাধানের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ছোয়ায় জামালপুর পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভায় রূপান্ত করবেন। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে আশাবাদী তিনি।          

অপরদিকে, ঘরে বসে নেই আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ দল বিএনপি। পর পর দু’বার নির্বাচিত বর্তমান পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা না এলেও বসে নেই তিনি। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। গত দুই বার তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমান উল্লাহ আকাশকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। ১/১১সহ দুই মেয়াদে প্রায় ১২ বছর ধরে জামালপুর পৌরসভায় পৌর পিতার দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী।

শহরের সৌন্দর্য বর্ধন, রাস্তাবাতি, পানি সরবরাহ, ঈদগাহ মাঠ, রাস্তাঘাট, ড্রেন, ব্রিজ, গণশৌচাগার নির্মাণসহ পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজ করেছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বিএনপি জোট ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রথমবার প্রায় ৪ হাজার ভোটে নির্বাচিত হলেও পৌরসভায় তার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য আ.লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে টানা দ্বিতীয়বার প্রায় ২১ হাজার ভোটে নির্বাচিত হন।

এবার টানা তৃতীয়বার মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে প্রচারণায় নেমেছেন তিনি ও তার দলের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে রাতদিন নির্বাচনী প্রচারণাসহ মিটিং, কর্মী সমাবেশ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায়  বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী দলীয় নেত্রীর চুড়ান্ত নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন।
 
এ ব্যাপারে বিএনপির মেয়ার প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত কয়েকটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখে চলতি পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তার উপর কোন দলের সঙ্গে আলোচনা না করে পৌর নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় পৌর নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির আশঙ্কা দেখছেন। তারপরও নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হলে তিনি আবারও মেয়র নির্বাচিত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এদিকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়াতে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। জামালপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী ব্যতীত এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত অন্য দলের কোনো প্রার্থীকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে জামালপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে হবে।

ভোটের ময়দানে এই লড়াই সহজ হবে না, বরং হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আওয়ামী লীগের প্রবল শক্তিমত্তার সঙ্গে টক্কর দিয়ে বর্তমান মেয়র বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন এবার হ্যাট্রিক করার রেকর্ড গড়তে পারবেন কি না জানা যাবে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের পর।

শুভ্র মেহেদী/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।