কৃষি জমিতে বালু উত্তোলন, অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক রংপুর
প্রকাশিত: ০৮:২৯ পিএম, ০৩ মে ২০২১

রংপুর নগরীর পরশুরামে ব্যক্তি মালিকাধীন কৃষি জমি দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। প্রায় দুই কিলোমিটার লম্বা পাইপ টেনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় মাসের পর মাস ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে মহলটি। এতে আবাদি জমি নষ্ট হয়ে জলাশয় সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

এ নিয়ে স্বরাষ্ট্র ও ভূমি মন্ত্রণালয়সহ রংপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ ও বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় এলাকাবাসী। তবে এখনো প্রতিকার মেলেনি তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পয়ধর মৌজার হারাটি গ্রামের কাইয়াগিলির দোলায় মৃত আব্দুস সালামের ছেলে কামরুজ্জামান ফারুকের পৈতৃক জমি পার্শ্ববর্তী জলকর এলাকার শাহীন হোসেন তার লোকজন নিয়ে জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন। সেখানকার ২৭০ শতাংশ জমি থেকে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু উত্তোলন করছেন শাহীন ও তার লোকেরা।

এ নিয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেয়া হলেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি জমি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাইয়াগিলির দোলার বিস্তীর্ণ ফসলি জমির মাঝখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ওই কৃষি জমির মাঝখানে জলাশয়ের মত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চাষাবাদও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে কৃষি জমির পাড়গুলোতে।

jagonews24

জমির মালিকানা দাবিকারী কামরুজ্জামান ফারুকের অভিযোগ, জলকর এলাকার ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত শাহীন হোসেন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে তাদের পৈতৃক জমি থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। সেই বালু কাইয়াগিলির দোলা হতে বুড়িরহাট কোবারু রোডে নির্মাণাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাণিজ্যিক ভাবে বিক্রি করছেন। অনেকবার নিষেধ করার পরও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বরং শাহীন হোসেন ব্যক্তিগত প্রভাবে তার লোকজন দিয়ে ওই জমি দখলে নিয়ে এখন নিজের দাবি করে যাচ্ছেন।

নিরুপায় হয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করাসহ কৃষি জমি রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন দফতরে লিখিত আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মিলছে না বলেও জানান তিনি।

একই এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান, বন্দে আলী ও আতিয়ার রহমান বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষি জমি বিনষ্ট করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে দুই কিলোমিটারের বেশি লোহার পাইপ টেনে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন শাহীন হোসেন। সেই বালু মেডিকেল পূর্ব গেট এলাকার নাজমুল আহসান সরকার ওরফে নাজু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ক্রয় করছেন। আমরা বিষয়টি নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ডিসি, এসপি, মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়েছি। লিখিত দরখাস্তও দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বরং আমাদেরও প্রভাবশালী শাহীন ও তার লোকেরা বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহীন হোসেন বলেন, ‘প্রয়োজন হলে সরেজমিনে অভিযোগ তদন্ত করে দেখেন। আমি বাইরে গাড়িতে আছি। পরে কথা বলব ‘ এ সময় তিনি বালু উত্তোলনের বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) বিলকিস বেগম বলেন, ‘কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমি এর আগেও জেনেছি। কিন্তু ওই জমির মালিক কে বা কারা তা আমার জানা নেই। আমাকে স্থানীয়রা অভিযোগ দিয়েছে। একই অভিযোগ বিভিন্ন অফিসেও দিয়েছে। ঈদের পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব।’

জীতু কবির/এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।