মিমকে সান্ত্বনা দেয়ারও কেউ রইল না
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দোতরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে মা বাবা ও দুই বোনের লাশ দেখে অঝোরে কাঁদছে ৯ বছর বয়সী মিম। তাকে সান্ত্বনা দেয়ারও কেউ নেই। স্বজন হারানোর কান্না থামছেই না।
শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ীর বাংলাবাজার নৌপথে দুই নৌযানের দুর্ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী মিম। দুর্ঘটনায় সে তার বাবা মনির মিয়া, মা হেনা বেগম, দুই বোন সুমী ও রুমিকে হারিয়েছে।
মিমের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলার পারুখালি এলাকায়। মিমের বাবা নিহত মনির মিয়া তার পরিবার নিয়ে থাকতেন ঢাকার মিরপুরে। সেখানে টেইলার্সের দোকান ছিল।
রোববার (২ মে) দুপুরে মিমের দাদি মারা যান। তবে সে তার দাদির নাম বলতে পারছে না। দাদির লাশ দেখতে পরিবারের সঙ্গে গ্রামে যাচ্ছিল মিম। সোমবার (৩ মে) সকাল পৌনে ৭টার দিকে অন্তত ৩২ যাত্রী নিয়ে স্পিডবোটটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে শিবচরের বাংলাবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সাড়ে ৭টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটে নোঙর করা বালুবোঝাই ‘শিফান শায়হান’ নামের বালুভর্তি বাল্কহেডে ধাক্কা খায় স্পিডবোটটি। এতে ঘটনাস্থলেই ২৬ যাত্রী প্রাণ হারান।
স্থানীয়রা পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। ফায়ার সার্ভিস ও নৌপুলিশ কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে কাঁঠালবাড়ির ইয়াছিন মাদবরকান্দি গ্রামের দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখেন।
দাদির লাশ দেখতে যাচ্ছিল মেয়েটি। এখন মা-বাবা ও দুই বোনের লাশ নিয়ে তাকে ফিরতে হচ্ছে।
মৃত ২৬ জনের মধ্যে রয়েছেন মিমের পরিবারের চারজন। আর জীবিত উদ্ধার হয় শুধু মিম। প্রথমে আহত অবস্থায় মিমকে পাচ্চর রয়েল হাসপাতালে নেয়া হয়। একটু সুস্থ হলে দোতরা স্কুলের মাঠে আনা হয়। মা, বাবা, দুই বোন নেই জেনে তার কান্না থামছেই না।
দুর্ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে যান শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান। তিনি লাশের সারি থেকে মিমের মাধ্যমে মনির, হেনা, সুমি ও রুমির লাশ শনাক্ত করেন।
ইউএনও আসাদুজ্জামান বলেন, উপজেলা প্রশাসন অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মিমসহ নিহত মনির, হেনা, সুমি ও রুমির মরদেহ তাদের নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। একসঙ্গে ২৬ জনের মৃত্যু। তারমধ্যে একই পরিবারের চারজন। এতিম মেয়েটির কান্না দেখে সহ্য করা যাচ্ছে না।
এসআর/এএইচ/এএসএম