নরসিংদীর এক অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
## ক্ষতিপূরণের অর্থছাড়ে ঘুষ নেয়া হয় ১৫-২০ শতাংশ হারে
## ক্ষতিপূরণের আশায় ৫৩ কি.মি. সড়কে নির্মিত হয়েছে ১৫- ২০টি ভবন
## এক ভবন নির্মাণের পর সেটির ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়
## ২৩ মার্চ বদলির আদেশ জারি হলেও বহাল তবিয়তে অফিস সহকারী আলমগীর হোসেন
নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. আলমগীর হোসেন। গত ২৩ মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তাকে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করেছে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলও অদৃশ্য শক্তিবলে নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন আলমগীর হোসেন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় কাজের সুবাদে পাচদোনা-ডাঙ্গা সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছে আলমগীর হোসেনের। সেই সুযোগে এই প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড় করাতে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তিনি ১৫-২০ শতাংশ হারে ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনের কার্যালয়ে এই অভিযোগ জমা পড়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে কোনো প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও ঘরবাড়ি ভাঙা হলে সে বাবদ তিনগুণ খরচ পরিশোধ করছে সরকার। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের কাছ থেকে তিনগুণ ক্ষতিপূরণের আশায় ২ থেকে ৩ বছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৫৩ কিলোমিটার অংশে নামে-বেনামে ১৫ থেকে ২০টি নিম্নমানের ভবন নির্মাণ করেছেন আলমগীর হোসেন।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে আলমগীর হোসেনের করা এমন ১১টি ভবনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আর এসব করে আলমগীর হোসেন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছেন পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে। এসব অনিয়ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ক্ষমতাধরদের মাসোহারা দেন। পাশাপাশি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোক তার আত্মীয়-স্বজন বলে পরিচয় দেন বলেও অভিযোগে জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাচদোনা-ডাঙ্গা চারলেন সড়কের প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে হলে আলমগীর হোসেনকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা দিতে হয়। কমিশন না দিলে দিনের পর দিন ভুক্তভোগীদের অফিসে ধরনা দিতে হয়। তাদের দাবি, আলমগীরের বিরুদ্ধে থাকা এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হোক। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
তবে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনও দাবি করছেন, বিল ওঠাতে কাউকে ঘুষ দেয়ার বিষয়ে তিনি জানেন না। সেই সঙ্গে বদলি হলেই যে আলমগীর হোসেনকে রিলিজ করে দিতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
দুদকে আলমগীরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
মো. আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগটি দাখিল করা হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। প্রায় একই ধরনের অভিযোগ দাখিল করা হয় ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে। এলাকাবাসীর পক্ষে দুটি অভিযোগই দাখিল করেছেন মোহাম্মদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মাধবদীর বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার অফিস সহকারী আলমগীর কথায় কথায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরিবারে সদস্যদের দোহাই দেন। তাই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে কেউ সাহস পায় না। জমি অধিগ্রহণের টাকা আনতে তাকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অগ্রিম দিতে হয়। তারপর বিল পাস হয়। তিনি সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।’
আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে জমা দেয়া অভিযোগ
আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে দুদক ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে, তা হলো-
১৫-২০ শতাংশ হারে ঘুষ নেন আলমগীর
দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আমরা নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণ। আমরা নরসিংদী এল এ শাখায় অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ উত্তোলন করতে গেলে অফিস সহকারী মো. আলমগীর হোসেনকে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে ঘুষ দিতে হয়। তিনি দীর্ঘ ৯ বছর যাবত একই শাখায় কর্মরত আছেন। অধিগ্রহণ শাখায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সে সুবাদে নরসিংদী জেলায় তিনি একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন। কোনো ভুক্তভোগী তার ঘুষ বাণিজ্য বা স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কথা বললে তার পোষা গুণ্ডাবাহিনীর আক্রমণের শিকার হতে হয়।’
ভূমি অধিগ্রহণের জমিতে আলমগীর রাতারাতি বানিয়েছেন ১৫-২০টি ভবন
দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অধিগ্রহণ প্রস্তাব দাখিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধু ভূমি মালিকদের সঙ্গে লিঁয়াজো করে ভবন বানিয়েছেন আলমগীর। বর্তমানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত ভূমিতে রাতারাতি তিনি ১৫ থেকে ২০টি বিশাল আকৃতির ভবন নির্মাণ করেছেন। যার আনুমানিক বিল হতে পারে ৫৫০ কোটি টাকা।’
এদিকে জাগো নিউজের অনুসন্ধানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৫৩ কিলোমিটার অংশে আলমগীর হোসেনের নামে-বেনামে ১১টি ভবন নির্মাণের তথ্য পাওয়া গেছে।
সেগুলো হলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর ইটাখলায় তিনতলার তিনটি ভবন, একই সড়কের শিবপুরের কামারটেকে ৭ শতাংশ জমির ওপর তিনতলার একটি ভবন, চৈতন্য এলাকায় ২০ শতাংশ জমির ওপর চারতলা ভবন, শিবপুরের গাবতলী ডিমান্ড অ্যাগ্রো ইন্ডাস্টিজ নামে ১৭ শতাংশ জমির ওপর পাঁচতলা ভবন, মরজালে দোতলা ও তিনতলার দুইটি ভবন, যোশর এলাকায় দোতলা ভবন, ভিটি মরজাল এলাকায় তিন ও চারতলার পাশাপাশি দুটি ভবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষতিপূরণ আদায়ের আশায় গত দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে এসব স্থাপনা তৈরি করেছেন আলমগীর।
নাহার ভবন বানিয়ে ১৪ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন আলমগীর
পাঁচদোনা-ডাঙ্গা রোডের ভূমি অধিগ্রহণের সময় অবৈধ অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে জনৈক নারীর নামে আলমগীর হোসেনের অর্থায়নে নাহার টেক্সটাইল ভবন নির্মাণ করে ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ওই নারীর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়। দুদকের মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে ওই নারীকে ইনজেকশন পুশের মাধ্যমে পাগল বানিয়ে মামলাটি স্থগিত করানো হয় বলেও দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে।
আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিভাগী কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দেয়া অভিযোগ
দালালের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেন
অভিযোগে উল্লেখ আছে, ‘আলমগীর হোসেন নরসিংদী জেলায় একটি শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তার সব টাকা দালালদের মাধ্যমে আদান-প্রদান হয়। উল্লেখযোগ্য দালালের তালিকায় রয়েছেন আহম্মদ আলী লিটন, তার নামে এনসিসি ব্যাংক নরসিংদী শাখায় হিসাব খোলা আছে। তার বেশিরভাগ লেনদেন এই এনসিসি ব্যাংক নরসিংদী শাখায় লিটনের হিসাবে হয়। অন্যান্য দালালদের মধ্যে রয়েছেন মোকলেছ, সালাহ উদ্দিন, মোসলেম, সিদ্দিকুর রহমান। তারা শুধু দালালই নন, তারা বেতনভুক্ত পোষা গুণ্ডা হিসেবে কাজ করছেন।’
ক্ষমতাধরদের মাসোহারা দেন আলমগীর
সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যোগাযোগ আছে দাবি করে আলমগীর হোসেন অবৈধ রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও দুদকে দাখিল করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তিনি এক সংসদ সদস্য ও এক মেয়রকে নিয়মিত মাসোহারা দেন বলে প্রচার করছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা তার কেনা, তাই তাকে কিছুই করতে পারবে না বলেও প্রচার চালান।
শাশুড়ি-শ্যালকের নামে করেছেন সম্পত্তি
আলমগীর হোসেন শাশুড়ি ও শ্যালকের নামে প্রায় শত কোটি টাকার জমি কিনেছেন উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং কোটি টাকা মূল্যের দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন আলমগীর।’
ডিসি কার্যালয়ের শৃঙ্খলা ভেঙে আলমগীরের শাসন
দুদকে দাখিল করা অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান জেলা প্রশাসকের আমলে তার স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাত্রা সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। নরসিংদী এল এ শাখা চলছে তার নিজস্ব আইনে। যেখানে বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় পেমেন্ট ফাইলে স্বত্বনির্ধারণ করেন সার্ভেয়ার/কানুনগোরা, সেখানে নরসিংদী জেলায় পেমেন্ট নির্ধারণে সার্ভেয়ারের পরে স্বাক্ষর করছেন অফিস সহকারী। তারপর এল এ ও অনুমোদন দিচ্ছে। ২০১৭ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ আইন কানুনগোর মাধ্যমে স্বত্ব নির্ধারণের বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কানুনগোর কোনো স্বাক্ষর নেয়া হয় না। নোয়েদাদ বুকে অফিস সহকারীর স্বাক্ষরের কোনো বিধান নেই, তা স্বত্ত্বেও কানুনগোর পরে অফিস সহকারী তারপরে এল এ ও স্বাক্ষর করছেন। সার্ভেয়াররা ১২তম গ্রেডের কর্মচারী এবং অফিস সহকারী ১৬তম গ্রেডের কর্মচারী। কিন্তু হাজিরা খাতায় সবার ওপরে অফিস সহকারী স্বাক্ষর করছেন। কানুনগো ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা, কিন্তু রোয়েদাদ বুকে ১০ম গ্রেডের কর্মকর্তার পরে ১৬তম গ্রেডের কর্মচারী তারপরে ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তার স্বাক্ষর করছেন। যা চরম অসদাচরণ হলেও দেখার যেন কেউ নেই। অফিসের সার্ভেয়ার, কানুনগো ও অন্যান্য স্টাফরা তার (আলমগীর) চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিনি যে ফাইল সামনে ধরছেন তাতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
যা বলছেন ভুক্তভোগীরা
পাচদোনা ইউনিয়নের সইকাধি গ্রামের আমির উদ্দিন নামে এক কৃষক বলেন, ‘পাঁচদোনা-ডাঙ্গা চারলেন প্রকল্পে আমাদের ১৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। আমাদের বিল হয়েছে তিন কোটি ১৪ লাখ। কিন্তু আমরা পেয়েছি ৬৫ লাখ টাকা। বাকি টাকা ডিসি অফিসের আলমগীর সাহেবরা নিয়ে গেছে।’
কেন টাকা নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তা সমন্ধে আমরা তো সব কিছু বুঝি না। এত টাকা বিল হবে তাও আমরা জানতাম না। পরে আমাদের ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে বাকি টাকা তারা নিয়ে গেছে।’
আমির উদ্দিনের আরও অভিযোগ, ‘টাকা দিয়েও বিল আনতে পারি না। আমার আরেকটা জমির ২২ লাখ টাকার বিল আনতে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা আলমগীরকে ঘুষ দিতে হয়েছে।’
এখনো বিল বকেয়া রয়েছে এমন একজন নাম প্রকাশের শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুই দফায় কয়েক লাখ টাকা বিল এনেছি। প্রথমে আমার কাছ থেকে বিলের ১২ শতাংশ হারে ঘুষ নিয়েছে। পরে আরেকটি বিলের জন্য এক বছর ধরে ঘুরছি। কিন্তু বিল দিচ্ছে না। পরে বলল বিলের ২০ শতাংশ ঘুষ দিতে হবে। তাতেও রাজি হয়েছি। তাও টালবাহানা করছে।’
আলমগীর হোসেনের বদলির আদেশ জারি করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি
একই গ্রামের মো. রুবেল হাসান নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘রাস্তার কাজে আমাদের জমি নিয়েছে। কিন্তু বিল ঠিকমতো পাইনি। বিল আনতে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ টাকা ঘুষ হিসেবে আলমগীর সাহেবকে আগে দিতে হয়েছে। পরে বিল পাস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তার কাজ হওয়ার কথা শুনেই ডিসি অফিসের আলমগীর এখানে নিম্নমানের জিনিস দিয়ে একটি পাঁচতলা বিল্ডিং করে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এলাকার উন্নয়নের জন্য টাকা ব্যয় করছেন। কিন্তু সেই টাকা চোরেরা খেয়ে ফেলছে। তাছাড়া এই চারলেন প্রকল্পকে কেন্দ্র করে একটি চক্র রাতারাতি অধিগ্রহণ করা এলাকায় দালান-কোঠা নির্মাণ করে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’
৩০ এপ্রিল অভিযুক্ত আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখন নরসিংদী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দুদকে ও বিভাগীয় কমিশন কার্যালয়ে আমরা বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো সম্পর্কে আমি জানি। অফিসাররা আসছিলেন, তদন্ত করছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই। আপনি আমার কথা বুঝেন নাই। একটা দল হইলো শয়তান, আরেকটা ফেরেশতা। ফেরেশতারা আমার সাথে আছে, আর শয়তানরা তাদের সাথে আছে। আমি এখান থেকে সরলে তারা কিছু অবৈধ কাজ করবে, এজন্য তারা একটা পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে করছে। কিন্তু তারা কাজগুলো হাসিল করতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখানকার একটা দালাল গ্রুপের সঙ্গে মিশি না। তাদের সাথে আমি মিশবো না। তারা প্রতিদিনই আমাকে বদলি করে, প্রতিদিনই আমাকে বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে। আমি সব বিষয়েই প্রস্তুত আছি। আর এই চক্রটাকে ধরার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করছি যে, এর পেছনে কারা কারা আছে।’
এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দুদক বা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে যে অভিযোগটি করেছে, আমার অফিসে তার কোনো কপি এখনও আসেনি।’
অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড় করাতে জমির মালিকদের ঘুষ দিতে হচ্ছে এমন অভিযোগ পাননি উল্লেখ করে ডিসি বলেন, ‘দুদক ও বিভাগীয় কমিশনের কার্যালয়ে যে অভিযোগটা করেছে, তার কপি আমার কার্যালয়ে আসেনি। ল্যান্ড অ্যাকুজিয়েশনের (ভূমি অধিগ্রহণ) প্রক্রিয়াটি একটি চেইন। এখানে ডিসি অফিসই কাজ করে না, প্রত্যাশী সংস্থাও কাজ করে। ডিসি অফিসের অংশ হলো শুধু পেমেন্ট (অর্থছাড়) দেয়া। পেমেন্ট দেয়ার ক্ষেত্রে স্টাফদের ইনভলবমেন্ট (সংশ্লিষ্টতা) আছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ভুক্তভোগী আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ দেয় নাই যে, এই ভুক্তভোগী পেমেন্ট নিতে গিয়ে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে। আমি যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, তাহলে সেটা আমার জন্য খুবই সুবিধার। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বদলির বিষয়ে ডিসি বলেন, ‘উনার বদলি হয়েছে। উনাকে রিলিজও করতে হবে। আমরা রিলিজও করবো। প্রথমত উনার জায়গায় আমাদের আর স্টাফ দেয়া হয় নাই। দ্বিতীয়ত, উনি তো একা টাকাপয়সা হ্যান্ডেল করেন না। মানুষকে যে পেমেন্ট করা হয়, এর পুরো হিসাবনিকাষ আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। বুঝিয়ে না দিলে পরে যিনি দায়িত্ব নেবেন, তিনি তো পুরো অন্ধকারে থাকবেন।’
ডিসি ফারহানা কাউনাইন বলেন, ‘আমার একটা প্রশ্ন, বদলি নিয়ে কি আপনাদের এত মাথাব্যথার কারণ আছে? বদলি একটা নিয়মিত প্রক্রিয়া। আবার বদলি হলে সকল অফিসার কিন্তু যায় না। তার জায়গায় কাউকে না পেলে আমরা তাকে ছাড়তে পারি না। বদলি হওয়ার এই অর্থ নয় যে, তাকে আমি এখনই ছেড়ে দেব। আমি যদি কাজটা বুঝে না নিই তার কাছ থেকে, তাহলে তারপরের জন যে কাজ করবে তার জন্য একটু একটু অসুবিধা হয়ে যাবে।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই পাঁচদোনা-ডাঙ্গা সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) সভায় অনুমোদন হয়েছে। এই সড়কে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়ে ৯৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। পরবর্তীতে তা আরও বাড়ানো হয়েছে। তার মধ্যে প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৩ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-সিলেটের দুই লেনের ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে চার লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। এ কাজে ব্যয় হবে মোট ১৭ হাজার ১৬১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে গড় খরচ পড়বে ৮১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার বেশি।
পিডি/এইচএ/এমএস