ফলন নিয়ে হতাশ নাটোরের ধানচাষিরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নাটোর
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০২১
ফাইল ছবি

নাটোরে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাচ্ছেন না বোরো ধান চাষিরা। ঘূর্ণিঝড়, শিলা বৃষ্টি ও পোকার আক্রমণে বেশিরভাগ জমির ধান পড়ে গেছে। ফলে ধানের ফলন কম হচ্ছে। তবে বাজারদর ভালো থাকায় ক্ষতি হয়নি এমন চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন।

হালিতি বিলের খোলাবাড়িয়া, খাজুরিয়া, বাশভাগ, নুড়িয়াগাছাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এসব গ্রামের অধিকাংশ জমির ধান পড়ে গেছে। ফলে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। ধান কাটা শ্রমিকদের বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ মণ করে ধান দিতে হচ্ছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে তাদের তেমন কিছুই থাকছে না।

এরমধ্যে বিপদে পড়েছেন বর্গা চাষিরা। জমির মালিক ও ধান কাটা শ্রমিকদের দিয়ে তাদের বিনিয়োগের টাকা উঠছে না।

খোলাবড়িয়া গ্রামের বিলের কয়েকজন চাষি জানান, কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড়ে ধান মাটিতে পড়ে যায়। কেটে ,মলে ১২ থেকে ১৫ মণ হারে ফলন হচ্ছে। শ্রমিক সংকটের কারণে বিঘাপ্রতি শ্রমিকদের ৫ মণ করে ধান দিয়ে তাদের কিছুই থাকছে না।

তারা জানান, এক বিঘা জমিতে বোরা ধান আবাদ করতে খরচ হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই খরচ বাদ দিয়ে কৃষকের তেমন কিছুই থাকছে না।
তবে যাদের ধান অপেক্ষাকৃত পরে আবাদ করেছেন তাদের ফলন ভালো হচ্ছে। এ ধরনের একজন কৃষক বলেন, তাদের বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২২ মণ হারে ফলন হচ্ছে। শ্রমিকের পরিবর্তে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটায় তাদের খরচও একটু কম হচ্ছে।

বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ ধান প্রকার ভেদে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দামটা আরও একটু বেশি হলে কৃষকরা লোকসান পুষিয়ে উঠতে পারতেন বলে মনে করছেন তারা।

এছাড়া সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী, ইটালী ও ডাহিয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, যেসব জমিতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল সেসব জমিতে ৬ থেকে ১০ মণ হারে ফলন হচ্ছে। শ্রমিকদের দিয়ে তাদের কিছুই থাকছে না। এসব এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও পোকার আক্রমণে ধানের ফলন কম হচ্ছে।

গোয়ালবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, কারেন্ট পোকার আক্রমণেতারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে নামমাত্র ধানও ঘরে তুলতে পারেনি।

হবিবর নামে অপর এক কৃষক জানান, কারেন্ট পোকার আক্রমণে তাদের আগাম ধান কেটে ফেলতে হয়েছে। ধানে চিটার পরিমাণ বেশি হওয়ায় ফলন হয়নি। শ্রমিকদের দিয়ে তাদের উৎপাদন খরচ ঘরে ওঠেনি।

তবে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের অন্যান্য অঞ্চলে ধানের ভালো ফলন হচ্ছে।

ডাহিয়া ইউনিয়নের আয়েশ গ্রামের স্কুলশিক্ষক ও চাষি আব্দুর রশিদ জানান, ডাহিয়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ জমিতে ১২ থেকে ১৬ মণ হারে ধান হয়েছে।

সোহরাব হোসেন নামে অপর একজন জানান, যেসব জমিতে ভালো ধান হয়েছে সেগুলোতে সর্ব্বোচ্চ ২০ মণ হারেও ধানের ফলন হয়েছে। তবে স্বাভাবিকভাবে এ অঞ্চলের ধানের ফলন ১২ থেকে ১৬ মণ।

নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার জানান, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরাধানের চাষ হয়েছে। কিছু অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও পোকার আক্রমণে ফলন কিছুটা কম হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন হেরফের হবে না। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি এলাকা বাদে বৃহত্তর চলনবিল ও হালতি বিলের অন্যান্য অংশে ধানের ফলন হয়েছে ভালো। এসব অঞ্চলে ২০ থেকে ২৫ মণ হারে বিঘাপ্রতি ফলন পাওয়া যাচ্ছে।

শ্রমিকের বিষয়ে তিনি বলেন, বোরো এ জেলার প্রধান ফসল। এ কারণে ধান তুলতে লক্ষাধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এসব শ্রমিকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো শ্রমিক সংকট নেই। ইতমধ্যেই চলনবিলে ৫০ ভাগ এবং হালতি বিলে ৪০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বাকি ধান কাটা শেষ হবে।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।